স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, “বাংলাদেশে কোনো খাদ্যের অভাব নেই। বাংলাদেশে এখন কেউ না খেয়ে থাকে না। বাংলাদেশে কোনো ভিক্ষুক দেখা যায় না। কেউ খালি পায়ে ঘুরে না, কেউ খালি গায়ে থাকে না।”
শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ প্রাঙ্গণে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্য খাতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক (আরডি) নির্বাচিত হওয়ায় মানিকগঞ্জে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কোনো বাড়িতে এখন আর অন্ধকার নেই। প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। অথচ বিএনপির আমলে প্রতিটি বাড়ি অন্ধকার ছিল। সে সময় বিদ্যুতের জন্য যখন দাবি তোলা হয়েছিল তখন গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশে সারের অভাব হয়েছিল, লুটপাট করেছিল। এ কারণে খাদ্যের অভাব হয়েছিল। দেশে খাদ্যঘাটতি হয়েছিল। দেশে এখন কোনো হারিকেনও নেই, কুপিও নেই। এখন কোনো বাঁশের ব্রিজও (সাঁকো) নেই। বাংলাদেশে কেউ না খেয়ে থাকে না। প্রত্যেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। জমিসহ ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমরা এলাকার, মানিকগঞ্জসহ সারা দেশের কাজ হাতে নিয়েছি। কখনই বলি নাই, আমরা কি করতে সক্ষম হয়েছি। কখনো বলার সুযোগ হয়নি। পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য বিভাগে বিপুল উন্নয়ন হয়েছে। সারা দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে ৪০ হাজার বেড ছিল, যা ৭০ হাজার বেডে উন্নতি করা হয়েছে। দেশে দশটি নতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এ ছাড়া ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের জন্যে দেশের আটটি বিভাগে আটটি হাসপাতাল হয়েছে।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “বাংলাদেশে মাত্র ৩০০ আইসিইও ছিল। করোনার সময় বেহাল অবস্থা ছিল আপনারা জানেন। বিভিন্ন পর্যায়ে সারা দেশে সেই আইসিইও বর্তমানে ১৫০০ হয়েছে। জেলা পর্যায়ে কোনো আইসিইও, ডায়ালাইসিস ছিল না, কিন্তু এখন প্রতিটি জেলায় ১০ বেডের আইসিইও এবং ১০ বেডের ডায়ালাইসিস করেছি আমরা। এটাই দেশের প্রথম উদ্যোগ। বাংলাদেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য সিট (আসন) ছিল তিন হাজার। বিগত ৫০ বছরেও এই সিট সংখ্যার বৃদ্ধি হয়নি, কিন্তু আমি পাঁচ বছরে সরকারি সকল মেডিকেল কলেজে সিট সংখ্যা ৭০ ভাগ বৃদ্ধি করে আড়াই হাজার সিট সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি। বর্তমানে দেশের সকল সরকারি মেডিকেল কলেজে সাড়ে পাঁচ হাজার সিট সংখ্যা রয়েছে। যেখানে আপনাদের ছেলে-মেয়েরা বিনা পয়সায় লেখাপাড়ার সুযোগ পাচ্ছে।”
বিএনপির উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “আপনারা অগ্নিসন্ত্রাস করছেন। মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন। প্রতিষ্ঠান পুড়িয়েছেন। মানুষকে কষ্ট দিয়েছেন। আজও আপনারা (বিএনপি) কষ্ট দিচ্ছেন। আজও আপনারা অবরোধ করছেন, জ্বালাও-পোড়াও করছেন। বাস-গাড়ি পোড়াচ্ছেন, পুলিশ হত্যা করছেন, মানুষ হত্যা করছেন। হত্যা করে পুড়িয়ে কখনো ক্ষমতায় আসা যাবে না। ক্ষমতায় আসতে হলে ভোটের মাধ্যমে আসতে হবে। আপনারা (বিএনপি) তো ভোটে বিশ্বাস করেন না, আপনাদেরকে ভোট দিয়েছিল, আপনারা (বিএনপি) দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।”
জাহিদ মালেক বলেন, “আমাদের বিরোধী যারা আছেন, আপনারা কী দিয়েছেন। আপনারা (বিএনপি) পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চান। আপনারা স্বাধীনতার সময় বিরোধীতা করেছেন, রাজাকার-আলবদর সৃষ্টি করেছেন। দেশকে আপনারা মুক্তি লাভ করতে দেন নাই, দুই লাখ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। আপনারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন। সিরিজ বোমা, গ্রেনেড হামলা আপনারাই (বিএনপি) করেছেন। বিদ্যুৎতে, সারে চুরি করেছেন।”
মন্ত্রী বলেন, “মানিকগঞ্জবাসী আওয়ামী লীগ, নৌকা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন। আপনাদের ভোটে তিনবার এমপি, প্রধানমন্ত্রীর আস্থা অর্জন করে দুইবার মন্ত্রী হয়েছি। বিগত পাঁচটি বছর আমরা আপনাদের নিয়ে কাটিয়েছি। আপনারা জানেন, করোনার সেই মৃত্যুর কষ্ট, যন্ত্রণা নিয়ে আমরা কাজ করেছি, অনেক সুখের দিকও ছিলও তবে দিনগুলো সবসময় সুখকর ছিল না।”
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ ফটো, যুগ্ম-সম্পাদক সুলতানু আজম খান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসরাফিল হোসেনসহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।