• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতির গেমচেঞ্জার মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩, ০৮:১৬ এএম
অর্থনীতির গেমচেঞ্জার মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র
এ প্রকল্পের প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট

কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আগামী ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিলের দিকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাচ্ছে প্রথম ইউনিট। যার উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প। গত ১১ নভেম্বর প্রথম ইউনিটটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাপান বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। চলতি বছরের ২৯ জুলাই কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। এটি ১৫০-২০০ মেগাওয়াট পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। উদ্বোধনের প্রথম দিনেও দেড়শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল।

তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র একটি। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর ২০২৪ সালের দিকে প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে।

মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, “বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের অন্যতম সম্পদ। এটিসহ কয়েকটি বড় প্রকল্প মহেশখালীতে করায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। এ প্রকল্পের প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট। ফলে বার্ষিক প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।”

বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে মাতারবাড়ির ১ হাজার ৬০০ একরের লবণ মাঠ ও চিংড়ি ঘেরে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের বৃহৎ ১২০০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতার এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা দিচ্ছে প্রায় ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) নিজস্ব তহবিল থেকে অবশিষ্ট ৭ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।

২০১৪ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (জাইকা) মধ্যে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রকল্পে আমদানি করা কয়লা লোড-আনলোড জেটি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, টাউনশিপ, স্থানীয় এলাকার বিদ্যুতায়ন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংযোগ সড়ক নির্মাণের মতো অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্য থাকবে।

কোল পাওয়ার সূত্র জানায়, জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুমিতমো করপোরেশন, তোশিবা করপোরেশন ও আইএইচআই এই প্রকল্পে নির্মাণকাজে ১ হাজার ১৫০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৮ হাজার মানুষ প্রতিদিন কাজ করছেন। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্ল্যান্টে কয়লা পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য জেটি ও সাইলোও নির্মাণ করেছে। ৮০ হাজার টন কয়লা ধারণক্ষমতার মাদার ভেসেল সহজেই জেটিতে নোঙর করতে পারবে। আর মাদার ভেসেল থেকে কয়লা আনলোড করতে মাত্র এক থেকে দুই দিন সময় লাগবে।

বিদ্যুৎ জালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, গভীর সমুদ্র বন্দরের কাছে অবস্থিত এই মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্ল্যান্ট থেকে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ১৩ হাজার ১০৪ টন কয়লার প্রয়োজন হবে।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্ল্যান্টে কয়লা পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য জেটি সাইলো ও নির্মাণ করেছে। সাইলোর ৬০ দিনের জন্য কয়লা সঞ্চয় করার ক্ষমতা রয়েছে। পাওয়ার প্ল্যান্টের নিজস্ব জেটিতে মাদার ভেসেল প্রবেশের জন্য একটি ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩০০ মিটার প্রশস্ত চ্যানেল খনন করা হয়েছে। ছাই রাখা ছিল এই প্রকল্পের আরেকটি চ্যালেঞ্জ। যা মোকাবিলায় এখানে একটি ছাই রাখার পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে ২৫ বছর ধরে ছাই সংরক্ষণ করা যাবে।

এখানে ৯০ একর ও ৬০০ একর জমি জুড়ে দুটি পৃথক ছাই পুকুর এবং কয়লা সংরক্ষণের জন্য ৮০ একর জমিতে ইয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস বা জোয়ার ভাটায় কোনো ক্ষতি হবে না। এ জন্য সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৪ মিটার উঁচুতে একটি বাঁধ ও বাঁধের ভেতরে ১০ মিটার উচ্চতায় অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। যেভাবে নকশা করা হয়েছে, উচ্চ জলোচ্ছ্বাসেও তা ডুববে না।
 

Link copied!