• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝলকানি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, প্রস্তুত পঞ্চগড়


পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৩, ০৯:৪৭ এএম
ঝলকানি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, প্রস্তুত পঞ্চগড়

কাঞ্চনজঙ্ঘা বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। ভারতের সিকিম ও নেপাল সীমান্তে এর অবস্থান। এ রাজকীয় চূড়ার দেখা মেলে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে। শীতের শুরুর দিকে যখন আকাশ মেঘ এবং কুয়াশামুক্ত থাকে, তখন পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে খালি চোখেই এই পর্বতশৃঙ্গের অপরূপ রূপ দেখা যায়। কয়েক দিন ধরে ভোর থেকে সন্ধ্যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার ঝলকানি অবলোকন করেছে পঞ্চগড়ের মানুষ।

হিমালয়ের খুব কাছে অবস্থানের কারণে এখানকার আবহাওয়া প্রাণ প্রকৃতি সবকিছুই ভিন্ন। তাই পঞ্চগড় জেলাকে হিমালয় কন্যাও বলেন অনেকে। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর টিলা থেকে শীত মৌসুমে দেখা যায় হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে থাকা সুউচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট। খুব কাছ থেকে এই পর্বত দেখতে যেতে হবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে টাইগার হিলে।

কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় মনোমুগ্ধকর শোভা উপভোগ করতে হাজারো ভ্রমণপিপাসু প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটক আসছেন পঞ্চগড়ে। পর্যটকদের নির্বিঘ্ন ভ্রমণে নিরাপত্তা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।

সকাল হতে না হতেই সফেদ সাদায় রূপ নেয়। দুপুরের পর কোনো কোনো সময় দেখতে পাওয়া যায় না। তবে শেষ বিকেলে গোধূলির আলোয় লালচে রূপ ধারণ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা, যা সন্ধ্যা অবধি দেখা যায়।

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ার সময়গুলোতে তেঁতুলিয়ায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলা বসে। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধদের পাদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে। মহানন্দা নদীর পাড়ে বসে থাকা, কারও সেলফি তোলা, ভিডিও করা, পর্যটকদের যত্রতত্র হাঁটাচলা, মহানন্দা নদী থেকে শত শত মানুষের পাথর উত্তোলনের দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন উৎসব চলছে।

উত্তরের এ জেলাজুড়ে আছে পর্যটনের আরও নিদর্শন। প্রাচীন স্থাপনা, প্রত্ন পর্যটন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গুপ্ত, পাল, সেন ও মুসলিম শাসনামলের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এ জেলা। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। দেশের একমাত্র চার দেশীয় স্থলবন্দর এ জেলায়।

আরও রয়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন ও জিরো পয়েন্ট, বিজিবি-বিএসফের জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনি, ইংরেজ আমলে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, সমতল ভূমির চা-বাগান, টিউলিপ গার্ডেন, আনন্দধারা পার্ক, ভিতরগড় দুর্গনগরী, মহারাজা দিঘি, পাথরের জাদুঘর, মোগল স্থাপনা মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বোদেশ্বরী পীঠ।

জেলার পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। সরকারিভাবে রয়েছে আবাসন ব্যবস্থা।

পর্যটনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে এ জেলায়। বিশেষ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসজুড়ে পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত থাকে তেঁতুলিয়া। এতে ব্যস্ততা বেড়ে যায় হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে। গতি পায় তিন চাকার ভ্যান আর অটোরিকশার মতো যানগুলোও।

তেঁতুলিয়ার একজন অটো ভ্যানচালক বলেন, “এই মৌসুমে শত শত মানুষ এখানে আসে। কাঞ্চনজঙ্ঘার পাশাপাশি তারা দলবেঁধে চা বাগান, রওশনপুরের আনন্দধারা, জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকায় যান। এ সময়টাতে আমাদের ভালো আয় হয়। অনেকে ভাড়ার পাশাপাশি বকশিশও দেয়।”

জান্নাত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দিনের বেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা শেষে সন্ধ্যার পর মহানন্দার পাড়ে বসে সীমান্ত লাইট ও শৈল শহর দার্জিলিংয়ের পাহাড়ের ওপরের নিয়ন বাতি জ্বলতে দেখা যায়। তাদের ঘরবাড়ি, যানবাহন চলাচলও দেখা যায়, যা অসাধারণ লাগে।

টুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান বলেন, “সারা বছরই পর্যটকরা তেঁতুলিয়ায় আসেন। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ার মৌসুম ও শীতকালে এখানে প্রচুর পর্যটক আসেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদান করে যাচ্ছি। যেকোনো সমস্যায় পর্যটকরা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা পাবেন। পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে তাদের ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”

Link copied!