• ঢাকা
  • রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ জ্বিলকদ, ১৪৪৪

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পদ্মায় চলছে ইলিশ নিধন


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২২, ০৮:২৪ এএম
নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পদ্মায় চলছে ইলিশ নিধন

ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি ও সংরক্ষণের ওপর ৭ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কাজে আসছে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে পাবনার পদ্মা নদীতে ইলিশ নিধন।

নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের বড় বড় ইলিশ অঞ্চলগুলোতে যখন স্থবিরতা বিরাজ করছে, ঠিক সেই সময়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই পাবনার সুজানগর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদীর এলাকাজুড়ে চলছে অবাধে মা ইলিশ নিধন। প্রতিদিন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেও মাছ নিধন বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ।

সরেজমিনে পদ্মা নদীর সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিকেল থেকে কয়েক শত মাছধরা ডিঙ্গি নৌকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নদীতে।

রোববার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমাণ দল সাতবাড়িয়া কাঞ্চন পার্ক এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩০ হাজার মিটার মাছধরা জাল জব্দ করে পুড়িয়ে দেন। আবার বিকেলেই কয়েকশ মৎস্যজীবী তাদের মাছ ধরার নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরার জন্য নেমে পড়েছেন। অভিযানের ভয় থাকলেও মাছ ধরা বন্ধ করছেন না তারা।

সুজানগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নুর কাজিম জামান খান জানান, ৭ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর থেকেই নদীতে নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে মৎস্য বিভাগ। তবে অভিযান অব্যাহত থাকলেও নদীতে মাছ ধরা থামাতে পারছে না তারা।

মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, সুজানগর উপজেলায় তালিকাভুক্ত প্রায় ৪ হাজার জেলে রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১২০০ জেলে ইলিশ মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত থাকেন। অভিযানের শুরু থেকেই তাদের সজাগ করা হলেও সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই অনেকেই প্রশাসনের নজর ফাঁকি দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন।

“আমরা যখনই সংবাদ পাচ্ছি তখনই সে এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে, কিন্তু প্রশাসনের লোক নদীতে নামলেই দূরে থেকে লক্ষ্য করে দ্রুত বেগে নৌকা চালিয়ে স্থান থেকে পালিয়ে যান তারা।”

উপজেলার প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদী এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হলেও চোর-পুলিশ খেলার মত পালিয়ে বেড়ান জেলেরা। ফলে বেশিরভাগ অভিযানেই মাছসহ হাতেনাতে জেলেদের ধরা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে নদী এলাকা ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের নদীতে মাছ অনেক কম পাওয়া গেলেও মহাজনের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ঝুঁকি মাথায় নিয়েই নদীতে মাছ ধরতে হচ্ছে তাদের।

সাতবাড়িয়া কাঞ্চন পার্ক এলাকার জেলে নুরাল খান বলেন, গত বছর এ সময় প্রতিদিন নদীতে জাল ফেলে অন্তত ২০-২২ কেজি মাছ পাওয়া যেত, কিন্তু এ বছর ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীতে জাল ফেলে ৭-৮ কেজির বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ বছর নদীতে পানির গভীরতা অনেক বেশি এবং নদীতে স্রোতও অনেক বেশি। সেজন্য নদীতে ইলিশ মাছ ধরা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নদীতে নামলেই প্রশাসনের ধাওয়া খেয়ে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে, ফলে তেলের খরচও উঠছে না।

এত ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে নুরাল বলনে, প্রতিটি জেলের মাথার ওপর রয়েছে বিপুল পরিমাণ মহাজনের ঋণের বোঝা। ঋণ পরিশোধ করে সংসার চালানোর জন্য ঝুঁকি মাথায় নিয়েই জেলেদের নদীতে নামতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সুজানগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নুর কাজিম জামান বলেন, সরকার দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মা ইলিশ রক্ষার জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার এ উদ্যোগ নিয়েছে। জেলেদের দুরবস্থার কথা মাথায় রেখে তালিকাভুক্ত প্রতিটি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বরাদ্দের চাল হাতে পাওয়া গেছে। অচিরেই তা জেলেদের মাঝে বণ্টন করা হবে।

এদিকে অবাধে মাছ ধরার পাশাপাশি নদী এলাকার আশপাশে গোপনেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। সাতবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই অন্য মাছের সঙ্গে কিছু ইলিশ মাছও নিয়ে এসেছেন। পাত্রের নিচে লুকিয়ে রেখেই এগুলো বিক্রি করছেন।

কথা হয় একজন মাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে, তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নদীতে অন্য মাছ ধরার জন্য জাল ফেলে দুটি ইলিশ পেয়েছি। তাই বিক্রি করতে এনেছি।”

Link copied!