ধার দেওয়া টাকা ফেরত পেতে আউয়ালের ‘হালখাতা’

সাধারণত সারাবছর বেচাকেনার পর বছর শেষে বাকি টাকা আদায় করতে হালখাতার আয়োজন করে থাকে ছোট-বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। গ্রাহকদের হালখাতার চিঠি দিয়ে অনুষ্ঠানের দিন তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে কুড়িগ্রামে ঘটেছে এক ব্যতিক্রম ঘটনা। পাওনা টাকা ফিরে পেতে এক স্কুল শিক্ষক হালখাতার আয়োজন করেছেন।

ওই শিক্ষকের নাম আব্দুল আউয়াল। তিনি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় এমএএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। পাওনা টাকা ফিরে পেতে তিনি দেনাদারদের কাছে হালখাতার চিঠি দেন।

আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময় বন্ধু ও পরিচিতজনেরা বিপদে পড়ে তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। দিতে দিতে ৩৯ জনকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ধার দিয়ে দেন তিনি। তবে দীর্ঘ সময়েও এসব টাকা ফেরত না পাওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েন। অবশেষে পাওনা টাকা ফিরে পেতে তিনি অভিনব এক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন। হালখাতার আয়োজন করেছেন তিনি। তবে এই আয়োজনের মাধ্যমে মাত্র দেড় লাখ টাকা তুলতে পেরেছেন। যারা টাকা ফেরত দিয়েছেন, তাদের হাতে বিরিয়ানির প্যাকেটও তুলে দিয়েছেন আবদুল আউয়াল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে আন্ধারীঝাড় বাজারে শামিয়ানা টানিয়ে টেবিল–চেয়ার নিয়ে বসেন শিক্ষক আবদুল আউয়াল সরকার। এ সময় তার কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়া ব্যক্তিদের অনেকে এসে হাতে টাকা তুলে দেন। আর আবদুল আউয়াল সরকার টাকা গুনে নিয়ে খাতায় তালিকা করে তাদের হাতে তুলে দেন বিরিয়ানির প্যাকেট।

আবদুল আউয়াল বলেন, “একজনের বিপদ-আপদে অন্যজন পাশে দাঁড়াবে, এটাই স্বাভাবিক। আর আমার কাছে টাকা থাকলে কেউ চাইলে আমি না করতে পারি না। কিন্তু বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনদের টাকা ধার দিতে দিতে সাড়ে তিন লাখ টাকা ধার হয়ে যায়। তারা টাকাটা দিচ্ছিল না। আর দীর্ঘদিনের ধার দেওয়া টাকা আমি লজ্জায় চাইতেও পারিনি। তাই এক বন্ধুর দোকানে হালখাতা অনুষ্ঠানে গিয়ে এই চিন্তা মাথায় আসে। পরে নির্বাচনের আগে তাদের সবাইকে হালখাতার চিঠি বিতরণ করি।”

আবদুল আউয়ালের দাবি, হালখাতা করায় ২০ জন উপস্থিত হয়ে টাকা ফেরত দিয়েছেন। এতে প্রায় অর্ধেক টাকা উঠেছে। ঢাকায় অবস্থান করার কারণে অনেক বন্ধু টাকা দিয়ে হালখাতা করতে আসেননি। অনেকেই ফোনে জানিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যেই টাকা পরিশোধ করবেন।

হালখাতা করতে আসা যোবাইদুল ইসলাম নামের একজন বলেন, “আমি ছয় মাস আগে আমার মেয়ের ভর্তির বিষয়ে তার কাছ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। পরে সমস্যার কারণে টাকা ফেরত দিতে পারিনি। নির্বাচনের আগে আমার বাসায় হালখাতার চিঠি দিয়েছে। আজ এসে টাকা পরিশোধ করলাম। হালখাতার মাধ্যমে ধার করা টাকা আদায়ের ঘটনা আমার জীবনে প্রথম দেখলাম। পাওনা টাকা দিতে পেরে আমারও ভালো লাগছে।”