• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

নাটোরে পাটের দামে হতাশ কৃষক


নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৩, ০৪:০৩ পিএম
নাটোরে পাটের দামে হতাশ কৃষক

পাটের উৎপাদন খরচ ও বর্তমান বাজার দরে হতাশ নাটোরের কৃষকরা। প্রতি মণে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা।

এবার প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ২ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে নিম্নমানের পাট ১ হাজার ৮০০, মধ্যম ২ হাজার ও ভালো মানের পাট দুই হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম ৬০০-৭০০ টাকা কমে যায়। প্রচণ্ড তাপদাহ ও খরায় গাছ মরে ফলন কমে যাওয়া, পাটের মান খারাপ হওয়ায় দামও কমে গেছে। যার ফলে প্রতি মণে ৩০০-৫০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে গত বছরের হাজার হাজার মণ পাট মজুত রয়েছে। তাছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে রপ্তানি কমেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা পাঠ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাটের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।

উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে দাবি করে কৃষকরা জানান, গত বছর এ সময়ে প্রতি মণ ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে মণে ৮০০-৯০০ টাকা লাভ হওয়ায় এবার চাষিরা বেশি আবাদ করেছেন।

উপজেলা উপলশহর গ্রামের কৃষক মারুফ হোসেন বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহ ও খরায় অনেক পাট গাছ মরে গেছে। এতে ফলন কম হওয়ায় প্রতি বিঘায় ৭-৮ মণের বেশি পাট হয়নি। ফলন ও দাম দুটোই কম হওয়ায় বিঘাপ্রতি কৃষকের কমপক্ষে ৩-৪ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।

মামুদপুর গ্রামের আবু রায়হান বলেন, “ফলন কিছুটা কম হলেও আমার পাটের মান ভালো। কিন্তু ব্যাপারীরা মণপ্রতি মাত্র ২ হাজার টাকা দাম বলছেন। এ দামে পাট বিক্রি করলে লোকসান হবে।”

শ্রীরামপুর গ্রামের মুকুল হোসেন বলেন, “গতবারের পাটও বাড়িতে আছে। এবারও পাট চাষ করেছি। কিন্তু দামের যে অবস্থা তাতে পাট বিক্রি করলে লোকসান হবে।”

একই গ্রামের রেজাউল করিম বলেন, “দাম কম হলেও বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে কম দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। পরে যদি দাম বাড়েও তাতে আমাদের মতো কৃষকের লাভ হবে না। কারণ যখন দাম বাড়ে, তখন আমাদের আর পাট থাকে না।”

জেলার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হলেও এবার ১০ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। কিন্তু আবাদের সময় খরার কারণে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষকরা জানান, কাটার সময় বিলে পানি না থাকায় অধিকাংশ কৃষক পাট দূরে নিয়ে গিয়ে ভাড়া পুকুরে জাগ দিয়েছেন। এতে প্রতি বিঘায় ৪-৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। আগে ৫০০ টাকায় শ্রমিক মিললেও এবার ৬০০-৭০০ টাকার নিচে মেলেনি। তাদের খাবার দিতেও খরচ পড়েছে। তাছাড়া বীজ, কীটনাশক, সারসহ চাষের অন্য খরচও বেড়েছে। অথচ বিঘাপ্রতি ফলন কমে গড়ে ৭-৮ মণ পাট পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে উপজেলার মৌখাড়া ও লক্ষ্মীকোল হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রচুর পরিমাণে পাট রয়েছে। তবে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকো ২ হাজার টাকায়। যেসব পাটের মান বেশি ভালো সেগুলো ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মৌখাড়া হাটের পাট ব্যবসায়ী শাহীন আলম বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কম থাকার কারণে দেশি কল-কারখানাগুলো পাট কিনছে না। এ কারণে ব্যবসায়ীদেরও পাট কেনায় আগ্রহ কম।”

তিনি বলেন, “গত মৌসুমে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে কেনা ১ হাজার মণ পাট আমার গুদামে পড়ে রয়েছে। কেনার পর থেকে দাম কমতে থাকায় বেচতে পারিনি। বর্তমান দামে বেচতে গেলেও লোকসান হবে। এ অবস্থায় নতুন করে পাট কেনা সম্ভব হচ্ছে না।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় পাটের ফলন ও মান কিছুটা খারাপ হয়েছে। এ কারণে বাজারে দাম কম। দাম কম পাওয়ায় কৃষকদের বর্তমানে পাটে লোকসান যাচ্ছে।

Link copied!