বাগেরহাটের মোংলা বন্দর দিয়ে কমেছে গাড়ি আমদানি। মূল্য বৃদ্ধি, আর্থিক ও ডলার সংকটের পাশাপাশি চাহিদা থাকার পরেও সময়মতো এলসি খুলতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে গাড়ি আমদানি খাত থেকে বন্দরের রাজস্ব আয়ও কমেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আমদানি যাতে বাড়ে, সেই প্রচেষ্টা রয়েছে তাদের।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয়েছিল ২০০৮-০৯ অর্থবছরে। ওই বছর গাড়ি আসে ২৫৫টি। এর পর ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয় ১৪ হাজার ৪৭৪টি গাড়ি। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৪৮৪টিতে। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৫৭৬টিতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এসেছে ৪ হাজার ৩৬৮টি গাড়ি।
খুলনা নগরীতে গাড়ি বিক্রির শোরুম আছে ৮-১০টি। নগরীর মজিদ সরণির এএসপি ড্রিম কার হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ চৌধুরী মিশন বলেন, গাড়ির দাম আগের চেয়ে এখন বেশি। প্রকারভেদে প্রতিটিতে ৩ থেকে ৬ লাখ টাকা করে দাম বেড়েছে। এ কারণে ক্রেতাদের আগ্রহ কম; বিক্রি তুলনামূলকভাবে কমে গেছে।
আবু সাঈদ চৌধুরী মিশন আরও বলেন, “ডলারের রেট বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও কেউ কেউ গাড়ি কিনছেন না। এছাড়া আগে ১০ বা ২০ শতাংশ মার্জিন দিয়ে এলসি খোলা যেত, এখন শতভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি করতে হচ্ছে।”
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) নির্বাহী কমিটির সদস্য আহসানুর রহমান আরজু বলেন, “সব গাড়ির দামই বেড়েছে। এজন্য বিক্রি এখন কম। সারাদেশে প্রায় ৪০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে। এছাড়া ডলার সংকট ও এলসি খুলতে জটিলতার কারণে গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে তুলনামূলকভাবে কম। সার্বিক পরিস্থিতিতে এ খাতের ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।”
এ অবস্থার জন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন এলসি খোলার জটিলতা ও অর্থনৈতিক মন্দাকে। বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, “বিলাসবহুল পণ্যের মধ্যে গাড়িও পড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে আমদানিকারকরা যথাসময়ে এলসি খুলতে পারছেন না। আগে যেখানে ১০টি এলসি খুলতে পারতেন, এখন সেখানে তিনটি পারছেন। গাড়ি বিক্রিও কমে গেছে। মানুষের পকেটে গাড়ি কেনার মতো টাকা নেই।”
এ ব্যাপারে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, “বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গত বছর গাড়ি আমদানিতে তারা কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন। চলতি অর্থবছরে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।”