• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

খননে ভাঙছে সেতু-স্লুইসগেট, দুর্ভোগে নদীপাড়ের মানুষ


নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম
খননে ভাঙছে সেতু-স্লুইসগেট, দুর্ভোগে নদীপাড়ের মানুষ

অপরিকল্পিতভাবে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নাউতারা নদী খননের কারণে স্লুইসগেটসহ কয়েকটি সেতু ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, দেড় বছর আগে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে নদীটি পুনঃখনন করা হয়। এরপর থেকে উজানের ঢলে স্লুইসগেটসহ ওই নদীর ওপরে থাকা অন্তত ৫টি সেতু দেবে গিয়ে ভেঙে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নদীপারের বাসিন্দারা।

জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নাউতারা নদীর ২৫ কিলোমিটার এলাকা খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে পুনঃখনন করে। ২০২১ সালের শেষের দিকে অপরিকল্পিতভাবে নদীটি খনন করা হয়। খননের পরপরই বর্ষায় উজানের ঢলে নদীর ওপরে থাকা স্লুইসগেট ও সেতু দেবে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের মধ্যপাড়া এলাকায় বন্যার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে প্রায় ১০ বছর আগে নাউতারা নদীর ওপর ৫০ মিটার একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীটি খননের পরে নিচের অংশের মাটি সরে স্লুইসগেটটি প্রায় ৬ ফুট দেবে যায়। এতে গেট অকেজো হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে নদীর গতিপথ বদলে যায়। ফলে স্লুইসগেটের দুই পাশের সংযোগ সড়কসহ ৫টি বসতবাড়ি ও মধ্যপাড়া সড়কটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, অপরিকল্পিতভাবে নদী খননের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেবে যাওয়া স্লুইসগেট এখন তাদের গলার কাঁটা। নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে তাদের কৃষিজমি ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে রাস্তা ও শতাধিক বসতবাড়িও।

নদী ভাঙনের শিকার মধ্যপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, “নদী খননের সময় স্লুইস গেট আর রাস্তার সর্বনাশ হয়েছে। গভীর করে নদী খনন করায় স্লুইস গেটটি দেবে যায়। এতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে বাঁধসহ আমাদের বসতভিটা ও ফসলিজমি নদীতে ধসে গেল।”

ছাতনাই মিয়াপাড়া গ্রামে ২০১৬ সালের দিকে নির্মাণ করা হয় ২০ মিটার সেতু। নদী খননের পর পুরো সেতুটি ৫ ফুট দেবে ভেঙে পড়ে। দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটিও সরে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা লাল মিয়া বলেন, সেতুটি ভেঙে পড়ায় প্রায় ২ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে। এতে সময়, অর্থ-দুটোই অপচয় হচ্ছে। যানবাহন ঢুকতে না পারায় এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ অনেকটাই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে পড়েছে। কেউ অসুস্থ হলে ঘাড়ে চেপে নদী পার হতে হয়।

একই গ্রামে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি সেতু মাঝ বরাবর ৩ ফুট দেবে গেছে। এছাড়া ভেঙে পড়ার ক্ষণ গুনছে ডিমলা-পূর্ব ছাতনাই মূল সড়কের সেতুসহ একাধিক সেতু।

নদীপাড়ের একাধিক বাসিন্দা বলেন, সেতুর খুটির গভীরতা বিবেচনায় না নিয়ে অতিরিক্ত গভীর করে নদী খনন করা হয়েছে। এছাড়া নদীর দুইপাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে অপরিকল্পিত বাঁধ দেওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে তাদের হাজার একর ফসলি জমি জলাবদ্ধ হয়।

পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, “সেতুর পাইলিংয়ের চেয়ে নদী খননের গভীরতা বেশি হওয়ায় পিলারের নিচের মাটি সরে গেছে। এখনও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করছে। তাই সেতু ভেঙে পড়ছে।”

নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, “আমি সদ্য যোগদান করেছি। তবে ভেঙে পড়া স্লুইসগেটের বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদদৌলা বলেন, “বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য পরিমাপ অনুযায়ী নদী পুনঃখননের কাজ হয়েছে। সেতুগুলো তৈরি হয়েছে অনেক আগে। তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পাউবোর সমন্বয়হীনতার কারণে নদীর পরিমাপ বিবেচনায় না আনায় এই অবস্থা হয়েছে।”

Link copied!