• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী আজ


নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৩, ০৯:১৩ এএম
শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী আজ
ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী আজ (বৃহস্পতিবার)। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় জন্ম হয় তার। তার বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবি। চেহারার সঙ্গে মিলিয়ে বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছিলেন লাল মিয়া।

১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করেন সুলতান। স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন এবং মাঝে মাঝে ছবি আঁকতেন। ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেন। পরে পড়ালেখা ছেড়ে ১৯৩৮ সালে চলে যান কলকাতায়। সেখানে চিত্রসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। ১৯৪৩ মতান্তরে ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। 

কিছুদিন কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতিদের সঙ্গে বসবাস এবং তাদের জীবন-জীবিকা ভিত্তিক ছবি আঁকেন সুলতান। ১৯৪৫ মতান্তরে ১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের লাহোরেও চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমেরিকা যান সুলতান। এরপর ইউরোপে বেশ কয়েকটি একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এ সময় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লিসহ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের ছবির পাশে এস এম সুলতানের ছবি স্থান পায়। 

১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্বোধন করেন যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইনাম আহম্মদ চৌধুরী। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’। অবশ্য অনেক আগেই স্বপ্নের শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এস এম সুলতান।

সুলতান তার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ১৯৯২ সালে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট দ্বিতল নৌকা তথা ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ নির্মাণ করিয়েছিলেন। সুলতান তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে খেটে খাওয়া মানুষ এবং সংগ্রামী জীবনের কথাই বেশি চিত্রিত করেছেন।

চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি এবং সুরযন্ত্র বাজাতেও পটু ছিলেন তিনি। সুলতান বিষধর সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি পুষতেন।

সুলতান ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’, ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’ ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন। এ ছাড়াও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার লাভ করেন। অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জন্মভূমি নড়াইলে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, সুলতানের জন্ম বার্ষিকী পালনে সুলতান ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সুলতান কমপ্লেক্সে শিল্পীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল।

অপরদিকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা হাতে নিয়েছে। সুলতান কমপ্লেক্স ও জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামে এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শিল্পীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শিল্পীর কর্মের ওপর ১০০ ফুট লম্বা শিশুদের অংকিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, বরেণ্য চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে আর্টক্যাম্প, শিশু চিত্রকর্মশালা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিশুদের নিয়ে নৌকা ভ্রমণ, শিল্পী এস এম সুলতানের চিত্রকর্মের পর্যালোচনা, আলোচনা সভা ও শিল্পীর জীবনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ প্রদর্শনী।

Link copied!