নওগাঁর শখের বসে নারীদের বানানো টুপি এখন পুরো গ্রামের নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে। নওগাঁ সদর, মান্দা ও মহাদেবপুর এই তিন উপজেলার প্রায় ৯০টি গ্রামের বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৫০ হাজার নারী টুপি তৈরি করে থাকেন। তাদের বানানো এই টুপি যাচ্ছে ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। ফলে দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।
জানা যায়, ওমানের জাতীয় টুপির নাম ‘কুপিয়া’ যা তৈরি হচ্ছে নওগাঁর মহাদেবপুরের নারীদের নিপুণ হাতে। নারীদের হাতে তৈরি এসব ‘কুপিয়া’ টুপির প্রধান ক্রেতা ওমান। এছাড়া সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, পাকিস্তান, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে ‘কুপিয়া’। মানভেদে একেকটি ‘কুপিয়া’ এক থেকে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়।
মহাদেবপুরে উপজেলার খোসালপুর, রনাইল, ভালাইন, সুলতানপুর, কুঞ্জবন, মধুবন, হরমনগর, খাজুর, শিবগঞ্জ, তাতারপুর, উত্তরগ্রাম শিবগঞ্জ, গোয়ালবাড়িসহ অন্তত ৬০ থেকে ৭০টি গ্রামে বিভিন্ন বয়সী নারী বিশেষ ধরনের এসব টুপি তৈরি করছেন। আর ঈদকে সামনে রেখে তাদের বেড়েছে ব্যস্ততা।
টুপি তৈরির কারিগররা জানান, খুচরা ব্যবসায়ীরা বিদেশি ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন নকশার ছাপ দেওয়া সাদা রংয়ের টুপির কাপড় ও সুতা কারিগরদের কাছে পৌঁছে দেন। এসব কাপড়ে সুঁই-সুতা দিয়ে সুন্দর সুন্দর নকশা ফুটিয়ে তোলেন নারীরা। বোতাম, চেন, দানা ও মাছকাটা নামে চার ধরনের টুপি সেলাই করেন তারা।
টুপিতে নকশা তৈরিতে সময় ও শ্রমের ওপর ভিত্তি করে কারিগরদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। কোনো টুপিতে নকশা তুলতে ২০-২৫ টাকা, আবার কোনো টুপিতে নকশা করতে ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। টুপিতে নকশা তৈরির কাজ করে একজন নারীর মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহাদেবপুরে প্রায় ১৫ বছর আগে শুরু হয়েছিল টুপি তৈরি কাজ। সারা বছরই এসব টুপি তৈরি হলেও রমজানে বেড়ে যায় চাহিদা। প্রকারভেদে এসব টুপি বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মূলত নারীরাই এসব টুপি তৈরি করে থাকেন। তারা একত্রিত হয়ে গল্পে আড্ডায় করেন টুপি সেলাইয়ের কাজ। তবে বর্তমান বাজার অনুসারে ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কারিগরদের।
কুঞ্জবন গ্রামের ফরিদা বেগম সংবাদ প্রকাশকে জানান, প্রতিটি টুপি তৈরি থেকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে পেয়ে থাকেন তিনি। দশ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে মহাদেবপুর সদরের ঘোষপাড়া এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন। এখানে এসে এক বছর পর এক প্রতিবেশির উৎসাহে শুরু করেন টুপিতে নকশা তোলার কাজ। স্বামী ও নিজের আয় দিয়ে এখন সংসার চলছে স্বাচ্ছন্দ্যে।
রনাইল গ্রামের কলেজছাত্রী লিপি খাতুন বলেন, “পড়াশোনার পাশাপাশি টুপি তৈরর কাজ করে মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হয়। এতে কলেজে যাওয়া-আসার খরচসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হয় এবং পরিবারেও দেওয়া হয়। তবে পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিকটা কম পাওয়া যায়।”
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এ মৌসুমে জেলা থেকে প্রায় ৬০-৭০ হাজার পিস টুপি তৈরি করা হবে। যার উৎপাদন খরচ প্রায় ৯ কোটি টাকা। তবে বাজারমূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এগুলো সবই রপ্তানি করা হবে। তবে সরাসরি নিজেরা রপ্তানি করতে পারলে বাড়তি দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারতেন তারা।
নওগাঁ জেলা বিসিকের উপব্যবস্থাপক এ বি এম আনিসুজ্জামান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, এ হস্তশিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করতে নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে মাত্র ৫% এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৬% সুদে ক্ষুদ্র ঋণ চালু রয়েছে। এ খাতের কারিগররা আগ্রহী হলে দেশে ও দেশের বাইরে প্রশিক্ষণ এবং বিপননের ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে।
 
                
              
 
																                   
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    




































