ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিকিম রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত থেকে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার পানির তোড়ে উজানের একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। উজান থেকে কয়েক ফুট উচ্চতায় প্রবল বেগে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে পানি। বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই পয়েন্টে বিকাল ৩টায় পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। দুপুর ১২টায় একই পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার নিচে।
এদিকে পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রাতের মধ্যে পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর পর্যন্ত উঠতে পারে বলে ধারনা করছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।
ইতোমধ্যে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা চরাঞ্চল ও তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ৫ হাজার পরিবার। বড় ধরনের বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।
এদিকে জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেইজে সতর্ক বার্তা জারি করেছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক। এ ছাড়াও মাইকিং করা হচ্ছে তিস্তা চারাঞ্চল ও তীরবর্তী এলাকায়।
লালমনিরহাট বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের (সিডব্লিউসি) তথ্য অনুযায়ী, উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম নামক একটি বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এদিকে রংপুর অঞ্চলসহ লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম এলাকায় রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে।
তিস্তার বাম ও ডান তীরের নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে মৌসুমী ফসলসহ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে সতর্ক বার্তা দিয়ে বন্যা মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। এছাড়াও মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয় নিতে ও প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, “আমরা জনপ্রতিনিধিদের মাইকিং করে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে সচেতন করতে বলেছি। সার্বিক খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের লোকজনদের পশুপাখিসহ প্রস্তুতি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, “উজানের ভারী ঢলে তিস্তায় আবারও বন্যা দেখা দিতে পারে। আমরা সার্বিক খোঁজখবর রাখছি।”