বেনাপোলে ৩০৮ কোটি টাকা রাজস্ব কমেছে

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল বন্দর দিয়ে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম ছয় মাসে পণ্য আমদানি কমেছে ৫৫ হাজার ৭৭১ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৬ দশমিক ২৬ মেট্রিক টন পণ্য। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪ দশমিক ৫৩ মেট্রিক টন পণ্য।

এই ছয় মাসে কাস্টমের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৬৩১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

কাস্টমস ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে খাদ্যপণ্য ও শিল্প কারখানার কিছু পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি খুলছে না। এতে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছে না।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিল ২৬ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। আমদানি কম হয়েছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যায়। গত বছর বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ৫৫৮ কোটি টাকা ৮ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছিল। অর্থবছরটিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সেখানে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলছে না। যে কারণে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে রাজস্বও কম আসবে এটাই স্বাভাবিক।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, “বর্তমানে বেনাপোলসহ যশোরের কোনো ব্যাংক এলসি খুলছে না। যেকারণে আমরা পণ্য আমদানি করতে পারছি না। এতে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পণ্য আনতে না পারার কারণে বিক্রি কমে গেছে। ব্যবসায়িকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যে কারণে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে।”

ইস্টার্ন ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল হক জানান, ডলার সংকটে বেশিরভাগ ব্যাংক এলসি খুলছে না। আর এলসি করতে না পারলে পণ্য আমদানি কীভাবে করবে।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান বাবলু জানান, সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন দেওয়ার নিয়ম করেছে। গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এতে আমদানির সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে দুরাবস্থায় রয়েছেন। এখন আমদানিকারকরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। একে তো ব্যবসা ভালো নেই, তার ওপর পণ্য আমদানি করতে না পারলে এর সঙ্গে জড়িতরা আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে। এছাড়াও কাস্টমের নানা হয়রানি আর বন্দর ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোল ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছে।