হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা আর আত্মীয়তার সেতুবন্ধন সুদৃঢ়ভাবে গড়ে ওঠে এই শারদীয় উৎসবের মধ্য দিয়েই। তাই এ উৎসবকে ঘিরে শেষ সময়ের চরম ব্যস্ততায় সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের প্রতিমা তৈরির শিল্পীরা।
টাঙ্গাইলে দিন-রাত পরিশ্রম করে তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছেন একেকটি অসাধারণ সুন্দর প্রতিমা। এরই মধ্যে মাটির কাজ শেষ করে এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। রঙ-তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ১২৪০ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পঞ্জিকা মতে জানা যায়, এ বছর দেবী দুর্গা ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে আসবেন। আর দেবী স্বপরিবারে স্বর্গালোকে দোলায় (পালকি) চড়ে বিদায় নেবেন।
আগামী ১১ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুভারম্ভ হবে। যথাক্রমে ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অষ্টমী, ১৪ অক্টোবর নবমী ও ১৫ অক্টোবর দশমীর দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জ্জনের মধ্য দিয়ে এবারের শারদীয় দূর্গোৎসব সম্পূর্ণ হবে।
এছাড়া ষষ্ঠী পূজার দিন থেকে ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পাড়া-মহল্লা থেকে গ্রাম।
সরেজমিনে বিভিন্ন মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মন্দিরগুলোতে খড় ও মাটি দিয়ে পরম যত্নে গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিমা। বর্তমানে প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। দুর্গাপূজা উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে চলছে ব্যাপক সাজসজ্জার কাজও। প্রতিটি মণ্ডপে দেবী দুর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকসহ অন্যান্য প্রতিমাগুলোকে। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমাগুলোর রূপকে ফুটিয়ে তুলছেন তারা।
প্রতিমা শিল্পী দীনবন্ধু পাল, গকুল চন্দ্র পাল জানান, তারা এ বছর একেকজন ৭ থেকে ১৫ টি করে প্রতিমা তৈরি করছেন। ষষ্ঠী পূজা শুরুর দিন পর্যন্ত রঙ-এর কাজ করতে হবে তাদের। তবে চাহিদার তুলনায় মজুরি কম পাচ্ছেন তারা। সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পান তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেলেও বাপ-দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, দুর্গাপূজা সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশের সদস্যরা নিরলস দায়িত্ব পালন করবেন। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা বিশেষ ডিউটিতে থাকবেন।
পূজা উপলক্ষে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি।