কোরবানি ঈদের পর কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও চামড়া এখনো বিক্রি না করতে পারায় শঙ্কায় আছেন রাজবাড়ীর ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীরা।
অনেক ব্যবসায়ীই লোন করে বা কষ্টে জমানো শেষ সম্বল নিয়ে ব্যবসায় নেমেছিলেন কিছু লাভের আশায়। এখন অবিক্রিত চামড়া পচে গিয়ে বিনিয়োগের সব অর্থই লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজবাড়ী বাজারে চামড়া মজুতদার রয়েছেন ১০ জনের মত। তারা প্রতিবছর কোরবানির ঈদের সময় কেনা চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেন। পরে ঢাকা ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে বিক্রি করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবারের ঈদে তাদের কেউ দুই লাখ টাকা, কেউ তিন লাখ টাকার চামড়া কিনেছেন। কোনো সরকারি সহায়তা বা ব্যাংক ঋণ ছাড়া ধার-দেনা করে সংগ্রহ করা মূলধন নিয়ে ব্যবসা করতে নেমে এখন পুঁজি হারানোর আশঙ্কা করছেন।
তাদের মধ্যে একজন নজরুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে চামড়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। এক সময় তিনি চামড়ার ব্যবসা করে খুব নামও করেছিলেন। এখন অব্যাহত লোকসানে মূলধন হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তার মতো অনেক ব্যবসায়ী এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। কয়েক বছরের অব্যাহত লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে জায়গা জমিও।
বিপ্লব হোসেন নামের এক চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, “আমি ৩০-৩৫ টাকা ফুট হিসেবে প্রায় আট লাখ টাকার গরুর চামড়া কিনেছি। এখন পর্যন্ত একটা চামড়াও বিক্রি করতে পারিনি। লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রেখেছি। আর ১৫-২০ দিনের মধ্যে চামড়াগুলো বিক্রি করতে না পারলে নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”
রাজবাড়ীর আরেক চামড়া ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এই কোরবানির ঈদে নিজের এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ৩০ টাকা ফুট হিসেবে ছয় লাখ টাকার চামড়া কিনেছিলাম। কিন্তু, এখন পর্যন্ত একটা চামড়াও বিক্রি করতে পারিনি।”
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীও কোরবানির ঈদের সময় গরু-ছাগলের চামড়া কিনে ব্যবসা শুরু করেন। তবে, কয়েক বছরের অব্যাহত লোকসানে তারা নতুন করে আর এই ব্যবসা করার আগ্রহ পাচ্ছেন না। অনেকে আবার ছোটখাটো বিনিয়োগেই লোকসানের পর চামড়ার ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে যাচ্ছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ করে বলেন, এদিকে সরকারের সুনজর না থাকায় এবং কিছু অবহেলার কারণে চামড়া খাতটি রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের এখন আর চামড়ার ব্যবসা করে লাভ থাকে না। কোনো রকম খেয়ে পরে বাঁচতে পারেন। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় সবাই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাবেন।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আরও বলেন, রাজবাড়ীতে কোনো কোম্পানির এজেন্ট নেই। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তাদের কেনা চামড়া কুষ্টিয়ায় গিয়ে বিক্রি করতে হয়।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম আশ্বাস দিয়ে বলেন, “চামড়া একটি জাতীয় সম্পদ। চামড়া যেন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে আমি খোঁজ-খবর রাখব এবং এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও কথা বলবো।”