• ঢাকা
  • রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২, ১০ মুহররম ১৪৪৬
সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন

চরবাসীর ভাগ্য বদল


লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২১, ০৯:০৯ এএম
চরবাসীর ভাগ্য বদল

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নে অবস্থিত তিস্তা শৈলমারী চর। এ চরে থাকেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। প্রতিবছর তিস্তা নদী গতিপদ পরিবর্তন হয়। এত নদী ভাঙনে তলিয়ে যায় শত শত একর আবাদী জমি। অসহায় হয়ে পড়েন হাজারও কৃষক।

চর থেকে উপজেলা শহরে যাওয়াও সহজ নয়। বর্ষাকালে নৌকায় চড়ে যাওয়া হয়। শীত বা অন্য সময়ে দীর্ঘ ২ থেকে ৩ কিলোমিটার বালুপথ হেঁটে, ছোট ছোট নালার পানি পার হয়ে যেতে হয় উপজেলা শহরে। নেই কোনো পাকা কিংবা কাঁচা সড়ক। নেই কোন আধুনিক সুযোগ সুবিধা।

এই চরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও নেই লেখাপড়ার উন্নত সুযোগ সুবিধা। কর্মসংস্থান বলতে চরের জমিতে হালচাষ, নদীতে মাছ ধরা আর চরে গরু-মোষ-ছাগল পালন করে কোন যাপন করেন চরবাসী। চিকিৎসা সুবিধাও একেবারেই নেই। এ যেন এক আলাদা কোন জনপদ!

তিস্তা চরের সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষগুলোর কষ্ট লাঘবের একমাত্র পথ হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন। বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় গত বছর কালীগঞ্জ উপজেলার ওই শৈলমারী চরে ৩০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানি।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য় বিদেশ থেকে আমদানী করা কোটি কোটি টাকা মূল্যের ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহন করতে তৈরি করা হয় রাস্তা,  ব্রীজ ও কালভার্ট। আর এভাবেই পাল্টে যাচ্ছে তিস্তা চরের চিত্র। সৌর বিদ্যুৎ চালু হলে আলোয় আলোকিত হবে তিস্তা চর।

এছাড়াও জেলা প্রশাসন ও সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে আলোচনা করেছে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। চর এলাকায় দুইটি বেইলি ব্রিজ, ১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করে এবং নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার এলাকা সাইওয়াল নির্মাণ কাজ শুরু করেছে তারা।

চরের কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে বিদ্যুতে খুঁটি বসিয়ে তার সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুত নিয়ে যান ওই দুর্গম চরাঞ্চলে। এতে অন্ধকারে আচ্ছন্ন ভোটমারী ইউনিয়নের ১ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে। অবরুদ্ধ শৈলমারী চরবাসীসহ তিস্তার অন্যান্য চরের মানুষের জীবন যাত্রা পাল্টে যাবে। আধুনিক সব সুবিধা ভোগ করবে চরবাসী। 

এদিকে করোনার মহামারির এই দুঃসময়ে সোলার প্রকল্পে চরের ৫ থেকে ৬শ’ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করছেন। ভালো মজুরি পেয়ে তারাও সন্তুষ্ট। 

চরের বাসিন্দা দবিয়ার রহমান বলেন, "দীর্ঘদিন এই বালু চরে আছি। কেউ খোঁজ নেয়নি। আমাদের কষ্ট ছিল ১২ মাসই। সৌর বিদ্যুৎ’ প্রকল্পটি এসে আমাদের ভাগ্য খুলছে। চরের রাস্তা নির্মান হওয়ায় খুব সহজে আমরা এখন উপজেলা যেতে পারছি।"

শৈলমারী চরের বাসিন্দা দেলদার মুন্সী, ওয়াহেদুল ইসলাম ও বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার জানান,  সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি তাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। এ প্রকল্পের কারণে স্বপ্নের পাকা রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। তাদের বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত তারা উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছেন। সহজেই তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার জন্য শহরে যেতে পারবেন। কর্মসংস্থানের জন্য তারাও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটতে পারবেন।

বিদ্যুৎ পেলে এই চরেই ছোট ছোট মিল, কারখানা গড়ে উঠবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চরের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তারা।

ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের প্রকল্প ডিরেক্টর অপারেশন আব্দুল হালিম জানান, বিদ্যুৎ সংকট দূর করতে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে এই সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মূল গ্রিডে সংযুক্ত করা হবে। এভাবেই কেটে যাবে লোডশেডিং’সহ বিদ্যুতের সংকট। তিস্তার পানি প্রবাহে যাতে কোন বাঁধা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য দুইটি বেইলি ব্রিজ ও ১৮ টি কালভার্ট নির্মাণ করেছেন ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড। এছাড়াও নদী ভাঙনরোধে হার্ড মেটিরিয়াল কাজ করা হয়েছে চার কিলোমিটার এলাকায়।

এছাড়াও এই উৎপাদিত বিদ্যুতের সুবিধা পাবেন চরের মানুষজনসহ লালমনিরহাট জেলার মানুষও। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকেই এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলেও তিনি জানান।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখবে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। সরকারের অগ্রাধিকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।"

Link copied!