• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

আ. লীগ নেতাকে ‘চাঁদা’ দিলে উপহারের ঘর


ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১, ০৬:৫৪ পিএম
আ. লীগ নেতাকে ‘চাঁদা’ দিলে উপহারের ঘর

ফেনীর সোনাগাজীতে আওয়ামী লীগ নেতাকে ‘চাঁদা’ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেলেন দিনমজুর নুরুল আফসার সবুজ।

মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুর উদ্দিন ওই দিনমজুরের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের একটি অডিও বুধবার (১৮ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদরবেশ গ্রামের জেবল হকের ছেলে। তিনি ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

টাকার বিনিময়ে ঘর পাওয়ার বিষয়ে দিনমজুর সবুজ বলেন, “পরিবার নিয়ে বসবাস করার মতো আমার নিজস্ব কোনো জমি ও ঘর নেই। মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আমি স্থানীয় ইউপি সদস্য জামশেদ আলমের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিই। এর কিছুদিন পর নুর উদ্দিন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান ৪০০ জনে ঘর পাওয়ার আবেদন করলেও তিনি ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমিসহ ১৩ জনের ঘর পাওয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত করেছেন। ঘরের রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া চলছে তাই টাকা না দিলে ঘর পাওয়া যাবে না বলে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি তাকে টাকা দিতে পারব না বলে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হন। পরে তিনি আবারও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা না দিলে ঘর অন্যদের নামে বরাদ্দ করা হবে জানালে উপায় না দেখে তার প্রস্তাবে রাজি হই। পরে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তাকে ১৫ হাজার টাকা দেই। টাকা নেওয়ার সময় তিনি বিষয়টি কাউকে জানালে ঘরের বরাদ্ধ বাতিল করা হবে বলে জানান।”
 
গত মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) উপজেলা প্রশাসন আমাকে ঘরের চাবি ও কাগজপত্র বুঝিয়ে দিলে নুর উদ্দিন রাতে আমার কাছে আরও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে না পেয়ে গালমন্দ করেন।

স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা সফি উল্যাহ জানায়, দলীয় পদের অপব্যবহার করে নুর উদ্দিন এলাকার সবুজসহ অনেকের কাছ থেকে ঘর ও বয়স্ক ভাতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা দাবি করেছে। তার বিরুদ্ধে সালিস বাণিজ্য ও মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা নুর উদ্দিন বলেন, “দলীয় কোন্দলের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। কোনো প্রকার চাঁদাবাজি ও সালিস বাণিজ্যের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঁদা চাওয়া ও আদায়ের অডিও ভাইরালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কথা বলবে জানিয়ে মোবাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিখন বনিক জানান, দক্ষিণ চরদরবেশ আদর্শগ্রাম আশ্রায়ন প্রকল্পে বসবাসের জন্য মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) ৩৭ জনের কাছে ঘরের চাবি ও কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে আরও ৪৭ জনের কাছে ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘর পেতে চাঁদাবাজির বিষয়টি তিনি অবগত নয় বলে জানান।

সোনাগাজী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এম জহিরুল হায়াত জানায়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এখানে কেউ অনিয়ম দুর্নীতি করলে ছাড় দেওয়া হবে না। ঘর পেতে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

Link copied!