দেশের বৃহত্তম কাপ্তাই লেক। সবুজ বৃক্ষ আচ্ছাদিত উঁচু-নিচু পাহাড়, শান্ত শীতল জলের কর্ণফুলী নদী, গভীর মমতা আর ভালবাসায় গড়া আদিবাসীদের বর্ণিল জীবন ধারা সব মিলিয়ে অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিলিত আহবান। এত সৌন্দর্য এক জায়গায় মিলিত হয়েছে দেশের যে স্থানটিতে তার নাম কাপ্তাই।
প্রকৃতির প্রায় সব রূপ-রং যেন এখানে এসে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে সেই সৌন্দর্যের সুধা পান করতে সারা বছরই প্রাকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের ভীর লেগে থাকে কাপ্তাইয়ে।
রাঙ্গামাটি কাপ্তাই একটি উপজেলা হলেও চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে কাপ্তাইয়ে যোগাযোগ খুবই সহজ। মাত্র দুই ঘণ্টা দশ মিনিট দূরত্ব।
ন্যাশনাল পার্ক : কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ থাকে কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে ঘিরে। বাংলাদেশ বন বিভাগের পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীনে কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কটি। পার্কে প্রবেশ করলেই এর নৈসর্গিক পরিবেশ যেকোনো পর্যটকদের অভিভূত করবে। কাপ্তাইয়ে ওয়াগ্গা ইউনিয়ন সীতার ঘাট থেকে কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক শুরু এবং কাপ্তাই লেক ও কর্ণফুলীর নদীর পাশ ঘেঁষে এই পার্ককে অপূর্ব সুন্দর এক সীমানা। কোনো ধরণের পূর্বানুমতি ছাড়াই কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে বেড়াতে পারবেন যে কোনো পর্যটক।
কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক সবার জন্য উন্মুক্ত তবে গভীর বনে প্রবেশ, থাকা খাওয়া এবং সংরক্ষিত বনের অভ্যন্তরে যাতায়াতের জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এই অনুমতিও মিলবে খুব সহজে।
কাপ্তাই হ্রদ : কাপ্তাই আর রাঙ্গামাটির মাঝখানে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে স্ফটিক নীল জলের কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই(কর্ণফুলী) হ্রদ বা কাপ্তাই লেক। পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেয়ার ফলে এই হ্রদ সৃষ্টি হলেও এ হ্রদের কৃত্রিমতা স্বাভাবিক সৌন্দর্যকেও ছাড়িয়ে গেছে।
কাপ্তাই হ্রদের ভ্রমণের বা নৌবিহারেও স্থানগুলির মধ্যে কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, ধুপ্যানী ঝর্ণা, গাছ কাটা ঝর্ণা, রাঙ্গামাটি, সুভলং ঝর্ণা, জুড়াইছড়ি, হরিণছড়া, রাঙ্গামাটি চাকমা রাজবাড়ী, প্রভৃতি স্থান উল্লেখ্যযোগ্য ন্যুনতম খরচের কাপ্তাই লেকের নৌবিহার করা সম্ভব। কাপ্তাই জেটিঘাট কাপ্তাই নৌবিহার শহীদ মোয়াজ্জেম নৌঘাটসহ লেকের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইঞ্জিন বোট সাম্পান ডিঙি নৌকা প্রভৃতির মাধ্যমে কাপ্তাই লেক ঘুরে বেড়ানো যায়।
কাপ্তাইয়ে রয়েছে কর্ণফুলী নদীর তীরে দেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার চিৎমরম ইউনিয়নে বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত।
কাপ্তাইয়ে চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারটি আদিবাসী ভাষায় চিংম্রং বৌদ্ধ বিহার হিসেবে বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পরিচিত। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, নেপাল, মিয়ানমার, ভারত, এমনকি আমেরিকা থেকে পূণ্যনার্থী এবং পর্যটকরা বৌদ্ধ ভিক্ষু দায়ক-দায়িকারা বৌদ্ধ বিহারে দর্শনে আসেন। এই বৌদ্ধ বিহারটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।