তীরে এসে তরী ডুবল ভারতের। দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে গেলেন ভারতের রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে হারলেন তিনি। প্রথম দু’টি ক্লাসিক্যাল রাউন্ড ড্র হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে হেরে গেলেন প্রজ্ঞা।
প্রথম র্যাপিড রাউন্ডে একটি চাল দিতে সাড়ে ৬ মিনিট সময় নেন প্রজ্ঞা। ২৫ মিনিটের খেলায় সেই একটি চালই প্রজ্ঞাকে পিছিয়ে দেয়। প্রজ্ঞার ভুলের সুযোগ নিয়ে ২.৫-১.৫ পয়েন্টে জিতে গেলেন কার্লসেন।
দাবা বিশ্বকাপে তুমুল আলোচনার ঝড় তোলা প্রজ্ঞানন্দের তাই এবার শেষটা আর বিশ্বকাপ জয়ে হলো না। তবে কার্লসেনের সর্বজয়ই হয়ে গেছে। এর আগে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী নরওয়েইজিয়ান কিংবদন্তি এবারই প্রথম বিশ্বকাপ জিতলেন। ক্লাসিক্যাল দাবার বড় সব টুর্নামেন্ট জেতা হয়ে গেল তাঁর।
টাইব্রেকারে প্রথম র্যাপিড রাউন্ডে শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক খেলছিলেন দুই প্রতিযোগী। রাজা-কে সামলে রাখছিলেন তারা। সময়ের নিরিখেও প্রায় সমানে সমানে যাচ্ছিলেন দু’জন। স্নায়ুর যুদ্ধ চলছিল। সেই সঙ্গে ঘড়ির দিকেও নজর দিতে হচ্ছিল তাঁদের। মাঝে একটি চাল দিতে গিয়ে সাড়ে ৬ মিনিট সময় নেন প্রজ্ঞা। সেখানে কিছুটা পিছিয়ে পড়েন তিনি। প্রজ্ঞার সময় কমতে থাকায় খেলায় ভুল করেন তিনি। তাঁর রাজা অরক্ষিত হয়ে যায়। তার সুযোগ নেন কার্লসেন। একটা সময় প্রজ্ঞার সময় ১০ সেকেন্ডের নীচে নেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে আসার কোনও সুযোগ ছিল না ভারতীয় দাবাড়ুর। হার স্বীকার করে নেন তিনি।
র্যাপিডের দ্বিতীয় রাউন্ডে সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলছিলেন কার্লসেন। ফলে শুরুতেই সুবিধা পান তিনি। প্রজ্ঞার খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছিল, যথেষ্ট চাপে রয়েছেন তিনি। ফলে প্রতিটি চাল দিতে সময় নিচ্ছিলেন। কার্লসেনের হাতে সময় থাকায় তিনি ফুরফুরে মেজাজে খেলছিলেন। ২২ চালের পরে ড্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন দুই প্রতিযোগী। ফলে খেলা জিতে যান কার্লসেন।
ফাইনালে ওঠার পথে সেমিফাইনালে প্রজ্ঞানন্দ হারিয়েছেন র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্রের ফাবিয়ানো কারুয়ানাকে, এর আগে শুরুর দিকে হারিয়েছেন র্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় হিকারু নাকামুরাকে। ১২ বছর ধরে র্যাঙ্কিংয়ে দাপট ধরে রাখা কার্লসেনের বিপক্ষেও গত ছয় মাসে তিনবার জিতেছে প্রজ্ঞানন্দ। কিন্তু আজ ফাইনালের টাইব্রেকারে আর পারলেন না।
প্রজ্ঞানন্দ শেষ পর্যন্ত শিরোপা না জিতলেও রানারআপ হওয়ায় ২০২৪ ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্টে সুযোগ পাচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বকাপের সেরা তিনজন ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্টে সুযোগ পাওয়ার কথা, কিন্তু কার্লসেন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্টে খেলবেন না। সে কারণে বাকি তিন সেমিফাইনালিস্ট এমনিতেই জায়গা পেয়ে যাচ্ছেন ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্টে।
প্রজ্ঞানন্দের রেকর্ড বলতে, কিংবদন্তি ববি ফিশার ও কার্লসেনের পর তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্টে সুযোগ পেলেন তিনি। আর প্রাইজমানির ৬০ হাজার ডলার তো আছেই।