চোট ভোগাচ্ছে তামিম ইকবালকে। এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ককে ফিট অবস্থায় পাওয়া যাবে কি না, এ নিয়ে আছে প্রশ্ন। সেই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তামিমের সঙ্গে আজ আলোচনায় বসেছিল বিসিবি। সেখানে বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, তামিম তাঁকে বলে দিয়েছেন যে ওয়ানডেতে আর অধিনায়কত্ব করবেন না।
বৈঠক শেষে তামিম বলেন, "আমরা অনেক আলোচনা করেছি। আমার সমস্যা, কী সমস্যা ছিল, কী হবে সামনে, সবকিছু নিয়ে। আমি একটা ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেটা উনাদেরকে বলেছি, কারণও জানিয়েছি, আজকে থেকে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করছি।"
পিঠের নিচের অংশের চোট নিয়ে অনিশ্চয়তা নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে বলে জানান তামিম। সিদ্ধান্তের কথা এই বৈঠক থেকেই ফোনে জানিয়েছেন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও।
"ইনজুরি একটা ইস্যু। আমি ইনজেকশন দিয়ে এসেছি। কিন্তু ইনজেকশনটাও কিন্তু হিট অ্যান্ড মিসের মতো। আমার কাছে মনে হয়, দলের জন্য সবসময়ই একটা কথা বলে এসেছি, সবকিছুর ওপরে সবসময়ই দলের কথাই ভাবি। আমার মনে হয়, দলের কথা চিন্তা করে আমার সরে যাওয়াটাই হবে সবচেয়ে ভালো। আমরা একসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি আজকে। আমার ম্যাসেজটা উনাকে দিয়েছি। উনিও বুঝেছেন এবং যা বলার আমাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছেন। তবে মূল ব্যাপার হলো এটি যে, আমার কাছে মনে হয়েছে, দলের ভালোর জন্য আমার অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত এবং মনোযোগ দেওয়া উচিত শুধু খেলোয়াড় হিসেবে ও যখনই সুযোগ আসবে, চেষ্টা করা উচিত নিজের সেরাটা দেওয়ার।"
অধিনায়ক হিসেবে না থাকলেও যিনি তাঁর জায়গায় যে আসবে, তাঁকে সহায়তা করার আশ্বাস দেন তামিম, ‘একাদশে খেললে যে অধিনায়ক থাকবে তাকে সহায়তা করব।’
তামিমের এই সিদ্ধান্ত তাদের কাছে বড় চমক হয়ে এসেছে বলেই দাবি করলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। আলোচনা করে নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হবে জানালেন তিনি।
"যদি তামিম শুধু বলত যে এশিয়া কাপ খেলছে না, তাহলে তো আমাদের প্রস্তুত ছিলই, সহ-অধিনায়ক লিটন দাস হতেন (অধিনায়ক)। এখন এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না দু-একজনের সঙ্গে কথা না বলে (নতুন অধিনায়ক কে) বলা যাচ্ছে না। ও যে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবে, এটা কিন্তু এখানেই প্রথম শুনলাম, আমার বাসায় আসার পর। আগে জানতাম না। যদিও আগে সবসময়ই বলে এসেছি, বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়ক তামিমই থাকবে। তবে ও দলের কথা চিন্তা করে, দেশের কথা চিন্তা করে একটা যে অনিশ্চয়তা আছে যে কোন ম্যাচ খেলবে কোনটা খেলবে না, এটা ওকেও পীড়া দিচ্ছে। ও নিজে থেকেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে।"
ওয়ানডেতে তামিম বাংলাদেশকে প্রথম নেতৃত্ব দেন ২০১৯ বিশ্বকাপের পরপর শ্রীলঙ্কা সফরে, নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা চোটের কারণে না থাকায়। পরের বছর মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর তাকেই দেওয়া হয় পাকাপাকি দায়িত্ব। কোভিডের কারণে যদিও তার নেতৃত্বের অধ্যায় শুরু হতে দেরি হয় কিছুটা। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। সেটিই এবার শেষ হলো।
সব মিলিয়ে ৩৭টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে জয় এসছে ২১টি, পরাজয় ১৪টি। ফলাফল হয়নি দুই ম্যাচে। সাফল্যের শতকরা হার ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশকে ৫টির বেশি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্যে সাফল্যের হারে তিনিই সফলতম।