• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
কাতার বিশ্বকাপ

শিয়ালকোট: আপনার বাড়ির বলটাও যেখান তৈরি


সৌরভ কুমার দাস
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২২, ১২:৫৬ এএম
শিয়ালকোট: আপনার বাড়ির বলটাও যেখান তৈরি
ছবিঃ সংগ্রহীত

আন্তর্জাতিক ফুটবলে পাকিস্তানের র‍্যাঙ্কিং কত? ১৯৪, বাংলাদেশেরও পিছনে। তবুও যদিও বলি ফুটবল বিশ্বকাপে পাকিস্তানও আছে। এটুকু পড়েই বিষ্ময় প্রকাশ করার কিছু নেই। মাঠের খেলায় পাকিস্তান, নেই অদূর ভবিষ্যতেও থাকার সম্ভাবনা নেই।

তবে মাঠের খেলায় না থাকলেও ১৯৯০ সাল থেকে ঠিকই ফুটবল বিশ্বকাপে জড়িয়ে থাকে পাকিস্তানের নাম। কিভাবে? চলুন আর রহস্য না করে একটু খোলাসা করা যাক।

পাকিস্তানের একটি ছোট্ট শহর, যার নাম শিয়ালকোট। ইতিহাস পড়ার অভ্যাস থাকলে শহরের নাম অজানা থাকার কথা নয়। বাংলাদেশে এখন ক্রিকেট আধিপাত্য দেখালেও ফুটবলের জনপ্রিয়তা যে এতটুকু কমেনি সেটা মাঝেমধ্যেই বোঝা যায়।

আচ্ছা, এবার মনে হতে পারে শিয়ালকোট থেকে কেন বাংলাদেশের ফুটবল জনপ্রিয়তা নিয়ে পড়লাম। তাহলে বলি, এমনও হতে পারে আপনার বাড়িতে যদি এই মুহূর্তে কোনো ফুটবল থাকে সেটাও হতে পারে শিয়ালকোট শহরে তৈরি। আমি একটু ঝুঁকি নিয়েই বলি এটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।

কারণ? কারণ হচ্ছে, বিশ্বে যত ফুটবল তৈরি হয় তার মোট ৭০ শতাংশ বলই তৈরি হয় শিয়ালকোট শহরে। ১৯৯০ সাল থেকে প্রায় প্রতি ফুটবল বিশ্বকাপেই শিয়ালকোটে তৈরি হওয়া বল দিয়েই খেলা হয়। শুধু তাই নয় চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগসহ একাধিক জনপ্রিয় ক্লাবভিত্তিক টুর্নামেন্টের বলও তৈরি হয় শিয়ালকোটেই।

এখন মনে হতে পারে, কেন বা কিভাবে শিয়ালকোট শহর ফুটবলের সূতিকাগার হয়ে উঠলো। একাধিক সূত্রমতে, ব্রিটিশদের ভারতবর্ষ শাসনামলে শিয়ালকোটে প্রথম ফুটবল তৈরি শুরু হয়।

ব্রিটিশরা বরাবরই ফুটবলকে পছন্দ করতো। কিন্তু ওই সময় ভারতবর্ষের কোথাও ফুটবল উৎপাদন হতো না। এমনকি ফুটবল খেলাটাও তখন কেউ ঠিকমতো বুঝতো না, জানতো না। এদিকে ব্রিটিশরা যে দেশ থেকে ফুটবল আনবে, সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হতো লম্বা সময়।

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ধারণা করা হয় ১৮৮৬ সালের দিকে এক ব্রিটিশ সার্জেন্টের ইংল্যান্ড থেকে আনা বল খেলার সময় লিক হয়ে যায়, যাকে বলে হাওয়া বেরিয়ে যাওয়ার ছিদ্র তৈরি হয়।

এরপর স্থানীয় এক মুচির কাছে ওই বলটি সারাতে দিয়েছিলেন তিনি। তখন মুচি খুব যত্ন করে বলটি নিখুঁতভাবে সারিয়ে দিয়েছিলেন। মুচির কাজ দেখে ওই ব্রিটিশ সার্জেন্ট এতই সন্তষ্ট হয়েছিলেন যে পরবর্তীতে ওই মুচিকেই নতুন ফুটবল তৈরি করার দায়িত্ব দেন।

এরপর ওই মুচিকে দেখেই বাকি ফুটবল তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে আলোর গতির মতো বাকিরা ফুটবল তৈরিকে পেশা হিসেবে নিতে শুরু করেন।

আর এখন তো ফুটবল উৎপাদনই শিয়ালকোটের মানুষদের প্রধান পেশা। শিয়ালকোট শহরের মোট জনসংখ্যার অন্তত আট শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এখন সরাসরি ফুটবল তৈরির পেশায় জড়িত।

তবে ফুটবল তৈরিতে এখনও শিয়ালকোটের মানুষ ম্যাশিনের চেয়ে নিজের হাতকেই ভরসা করেন বেশি। এ কারণতেই হয়তো এখনও ৮০ শতাংশ মানুষ ফুটবল সেলাই করেন নিজ হাতে। তাদের মতে, হাতে শেলাই করতে কষ্ট হলেও বলের ভারসাম্য সঠিক করতে তারা এভাবেই করেন।

একটি বল হাতে সেলাই করলে পারিশ্রমিক বাবদ ১৬০ পাকিস্তানি রুপি পাওয়া যায়, যেটা বাংলাদেশি টাকায় দাড়ায় ৭৬টাকা। একটি বল হাতে শেলাই করতে তিন ঘণ্টা প্রয়োজন হয়। ফলে যদি কেউ প্রতিদিন তিনটি বল শেলাই করতে পারেন তাহলে তার মাসিক আয় দাড়ায় বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকা।

শেলাইয়ের কাজে সাধারণত বেশিরভাগ নারীকে দেখা যায়। । আর পুরষুরা ফুটবল তৈরির বিভিন্ন উপাদান প্রস্তুত করেন। তবে শুধু বল তৈরি করলেই হয় না, সেগুলো ফিফার মানদণ্ড অনুযায়ী তৈরি হয়েছে কিনা সে বিষয়েও পরীক্ষা করা হয়।

চলতি ফুটবল বিশ্বকাপেও এই শিয়ালকোটে তৈরি বল দিয়েই খেলেছেন, লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমাররা। ফলে মাঠের খেলায় না থাকলেও বিশ্বকাপে ঠিকই আছে পাকিস্তান, আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে শিয়ালকোট।  

Link copied!