বিশ্বকাপে টানা অষ্টম জয় তুলে নিলো ভারত। কলকাতায় তারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে ২৪৩ রানের বড় ব্যবধানে। ভারতের দেওয়া ৩২৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২৭.১ ওভারে ৮৩ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। বিরাট কোহলির জন্মদিনটা জয় দিয়ে স্মরণীয় করে রাখল ভারত। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বিরাট কোহলি।
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শুভমান গিলকে নিয়ে দারুণ একটা শুরু করেন অধিনায়ক রোহিত। প্রায় ওভার প্রতি ১২ এর কাছাকাছি রানরেটে রান তুলে ষষ্ঠ ওভারের রাবাদার শিকারে পরিণত হন, ২৪ বলে ৬ চার ও ২ ছয়ে ৪০ রান করা ভারতীয় অধিনায়ক। দলীয় ৯৩ রানে আরেক ওপেনার গিলকে ফেরান কেশভ মহারাজ। আউট হওয়ার আগে গিল করেন ২৪ বলে ২৩ রান।
ম্যাচের হাল ধরেন বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৩৪ রান তোলেন এই দুই ব্যাটার। ভারতের বড় সংগ্রহের ভিতটা এখানেই গড়ে দেয় এই দুই ব্যাটার। দলীয় ২২৭ রানে লুঙ্গি এনগিডির শিকারে পরিণত হন আইয়ার। ৮৭ বলে ৭ চার ও ২ ছয়ে ৭৭ রান করেন তিনি। আগের ম্যাচের মতো আবারও সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে বিদায় নেন এই ব্যাটার। উইকেটে আসা লোকেশ রাহুল থিতু হওয়ার আগেই ফিরে যান। ১৭ বলে ৮ রান লোকেশকে ফেরান মার্কো ইয়ানসেন।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে কোহলি সূর্যকুমারের সঙ্গে ৩৬ রানের জুটি গড়েন। ১৪ বলে ২২ রান করে শামসির শিকারে পরিণত হন সূর্যকুমার।
সাবধানী ব্যাটিং করা কোহলি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। অবশেষে ৪৯তম ওভারে রাবাদার বলে ১ রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। সেই সঙ্গে ছুঁয়ে ফেলেন শচীন টেন্ডুলকারকে। ২৯০তম ওয়ানডে ম্যাচে ২৭৮তম ইনিংসে ৪৯তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন তিনি। সমান সংখ্যক সেঞ্চুরির জন্য টেন্ডুলকার ৪৬৩ ম্যাচের ৪৫২ ইনিংসে ব্যাট করেছিলেন।
শেষ পর্যন্ত কোহলি ১২১ বলে ১০ চারে ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন। এছাড়া ১৫ বলে ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংসে ভারতের সংগ্রহটা বড় করেন রবীন্দ্র জাদেজা। তিনিও অপরাজিত ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে পাঁচ বোলার ভারতের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে তুলে নেন।
এবারের বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচের মধ্যে পাঁচ ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকা করেছে ৩০০+ রান। তাই বলাই যায়, ভারতের দেওয়া ৩২৭ রানের লক্ষ্য সহজেই টপকে যাবে প্রোটিয়ারা। কিন্তু চেজিংয়ে যে দুর্বল প্রোটিয়ারা তা আবারও প্রমাণ হলো। ভারতের বিপক্ষেও ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিল দলটি। হারতে হয়েছে বড় ব্যবধানে। এর আগেও চেজিং করতে গিয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হেরেছে তারা। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল ১ উইকেটে।
ভারতের বিপক্ষে প্রোটিয়ারা হেরেছে তিনজন ক্রিকেটারের কাছে। ব্যাট হাতে প্রোটিয়া বোলারদের ওপর শাসন করেছিলেন বিরাট কোহলি। করেন সেঞ্চুরি। আর তার সঙ্গে শ্রেয়াস আইয়ার খেলেন হাফসেঞ্চুরির একটি ইনিংস। আর বল হাতে প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দেন রবীন্দ্র জাদেজা।
তবে প্রোটিয়াদের প্রথম উইকেটটা তুলে নেন মোহাম্মদ সিরাজ। এবারের বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে থাকা কুইন্টন ডি কক ফেরেন ৫ রান করে। এরপর পাওয়ারপ্লের আগে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকেও হারান তারা। রবীন্দ্র জাদেজার বলে বোল্ড হন বাভুমা। পাওয়ারপ্লের শেষ বলে আঘাত হানেন মোহাম্মদ শামি। ফিরে যান এইডেন মার্করাম। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
ক্রিজে দুই বিশ্বস্ত ব্যাটার হেনরিখ ক্লাসেন ও রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। এই দুজনের ব্যাট থেকে রানের দেখা পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা পেল না কিছুই। ১১ বলে ১ রান করে দলীয় ৪০ রানে ফিরেছেন ক্লাসেন। আর পরের ওভারে কোনো রান না করেই আউট ভ্যান ডার ডুসেন। ৩২ বলে তার রান ১৩। দুইজনের উইকেট গিয়েছে জাদেজা আর শামির ঝুলিতে।
ডেভিড মিলার আর মার্কো ইয়ানসেন তবু আশা হয়েছিলেন ক্রিজে। তবে সেটাও অতি অল্প সময়ের জন্য। মিলার করেছেন ১১ আর ইয়ানসেনের স্কোর ১৪। জাদেজা আর কুলদীপের শিকার তারা। টেলএন্ডারদের কেউ অবশ্য মিরাকল ঘটাতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয়েছে মাত্র ৮৩ রানে। ৯ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন জাদেজা।
