এশিয়া কাপের ফাইনালের মঞ্চটাই যেন পুনরায় ফিরে এল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে। ভারতের বোলারদের দাপটে লঙ্কান ব্যাটিং লাইন আপ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ভারতের দেওয়া ৩৫৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে লঙ্কানরা গুটিয়ে যায় মাত্র ৫৫ রানে। ভারতের জয় ৩০২ রানে। বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ড গেড়ল ভারত। অষ্টম উইকেটে কাসুন রাজিথা ও মাহেশ থিকসানার ২০ রানের জুটি লজ্জার বেশকিছু রেকর্ড থেকে রক্ষা করে লঙ্কানদের। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মোহাম্মদ সামি।
মুম্বাইয়ের ব্যাটিং প্যারাডাইস উইকেটে টস জিতে সবাইকে অবাক করে লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস নিলেন বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত। ভারতের ওপেন করতে আসা রোহিত শর্মা শুরুটা করেন চার দিয়ে। ইঙ্গিত ভালো শুরুর। কিন্তু পরের বলেই তাকে ফেরান দিলশান মাদুশাঙ্কা।
এরপরই শুভমান গিল-বিরাট কোহলি ব্যাট হাতে শাসন করে লঙ্কান বোলারদের ওপর। রোহিতের ফেরার ধাক্কা কাটিয়ে ব্যাটিং পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে তোলেন ৬০ রান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন কোহলি-গিল। গিলের চেয়ে বেশি আগ্রাসী ছিলেন কোহলি। দুজনই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।
দুজন মিলে ১৭৯ বলে গড়ে ফেলেন ১৮৯ রানের জুটি। এরপরই বল হাতে মাদুশঙ্কা ম্যাজিক। পরপর দুই ওভারে তুলে নেন বিরাট ও গিলের উইকেট। প্রথমে তার শিকার শুভমান গিল। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৮ রানে দূরে থাকতে ফেরেন গিল। ৯২ বলে ৯২ রান করা গিলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ১১ চার ও ২ ছক্কায়।
তার বিদায়ের পর স্কোরবোর্ডে আর তিন রান যোগ করতেই বিদায় নেন বিরাট কোহলি। ফেরেন আরও একটা আক্ষেপ নিয়ে। মুম্বাইয়ে শচীন টেন্ডুলকারের সামনে শচীনের রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারলেন না বিরাট। ফিরলেন ৮৮ রান করে। আক্ষেপ বাড়লো আরও একটু।
এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও এমন হতাশায় পুড়তে হয়েছিল কোহলিকে। দলের জয় পেতে দরকার ছিল ৫ রান। সেঞ্চুরির ম্যাজিক ফিগারে যেতে কোহলিরও দরকার আর ৫ রান। এমন সমীকরণে ক্রমাগত স্লোয়ার ছেড়েছেন কিউই বোলাররা। তাতে ধৈর্য হারিয়ে আকাশে বল তুলেছেন কোহলি। ৯৫ রানে আউট হয়ে ফিরেছেন রাজ্যের হতাশা নিয়ে।
এরপর শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুল রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেন। এই জুটি ৬০ রান যোগ করার পরই আবারও মাদুশঙ্কার আঘাত। লঙ্কান এই বোলারের চতুর্থ শিকার হওয়া লোকেশ করেন ২১ রান।
তবে, একপাশ আগলে রেখে দারুণ ব্যাটিং করে যান শ্রেয়াস আইয়ার। তবে তিনিও মিস করেন সেঞ্চুরি। ফেরেন ৫৬ বলে ৮২ রান করে। শ্রেয়াসকে ফিরিয়ে পঞ্চম উইকেট পান মাদুসাঙ্কা। তার বিদায়ের পরও ম্যাচের বাকি ছিল ১৫ বল। শেষদিকে রবীন্দ্র জাদেজার ২৪ বলে ৩৫ রানের কল্যাণে সাড়ে তিনশ পার করে ভারত। লঙ্কানদের হয়ে পাঁচ উইকেট নেন মাদুসাঙ্কা।
বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে লঙ্কানদের শুরুটা হয়েছে হতশ্রী। ভারতীয় তিন পেসারের সামনে অসহায় আত্মসমর্পন করে লঙ্কান ব্যাটাররা। ১০ ব্যাটারের ভিতর মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের দেখা পায়। পাঁচ ব্যাটসম্যান আউট হন শূন্য রানে। যেখানে তিন ব্যাটসম্যান গোল্ডেন ডাক মেরেছেন।
পাথাম নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে ধ্বংসযজ্ঞের শুরুটা করেন জাসপ্রিত বুমরাহ। পরের ওভারের প্রথম বলেও উইকেট। এবার দিমুথ করুনারত্নেকে গোল্ডেন ডাক উপহার দেন মোহাম্মদ সিরাজ। ওয়ানডে ইতিহাসে এবারই প্রথম দুই ওপেনিং বোলার নিজেদের প্রথম বলেই পেলেন উইকেটের দেখা।
সেই ওভারের পঞ্চম বলে লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসের স্টাম্প উড়িয়ে দেন সিরাজ। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে সাদিরা সামারিবিক্রমাকে শিকার করার পর ফিরিয়ে আনেন এশিয়া কাপ ফাইনালের স্মৃতি।
তবে লঙ্কানদের গুঁড়িয়ে দেওয়ার বাকি কাজটা সারেন শামি। আগের দুই ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে ডানহাতি এই পেসার জানিয়েছিলেন কতটা আগুনে ফর্মে আছেন তিনি। ইনিংসের দশম ওভারে প্রথমবার তার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এরপর একে একে শামির শিকারে পরিণত হয় চারিথ আসালাঙ্কা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, দুশান হেমন্থ, দুশমন্থ চামিরা ও কসুন রাজিথা। যার ফলে ২০ ওভারও খেলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। সর্বোচ্চ ১৪ রান রাজিথার ব্যাট থেকে।
মাত্র ৫ ওভারে ১৮ রান খরচ করে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফাইফার তুলে নেন শামি। ভারতের হয়ে শেষ উইকেটটি নেন রবীন্দ্র জাদেজা।