• ঢাকা
  • শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেটে ঘুষোঘুষির দিন ‘বক্সিং ডে’


পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, ০৬:১০ পিএম
ক্রিকেটে ঘুষোঘুষির দিন ‘বক্সিং ডে’

প্রতি বছরের শেষ দিকে এক-দুইটা টেস্ট ম্যাচের সাথে একটি বিশেষ নামজুড়ে দেওয়া হয়! আর তা হলো ‘বক্সিং ডে’। সব ক্রিকেটপ্রেমী এই শব্দের সাথে কম বেশি পরিচিত। সবার মনেও একবার হলেও মনে প্রশ্ন জাগে কিভাবে এলো ‘বক্সিং ডে’ টেস্ট। বড়দিনের পরের দিন হলো বক্সিং ডে, আর এদিনে যে টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করা হলো সেটাই বক্সিং ডে টেস্ট নামে পরিচিত।

ক্রিকেটে ‘বক্সিং ডে’-র জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, ১৮৫৬ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়েছিল বক্সিং ডে ম্যাচ। তবে সেটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল না। ছিল অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া লিগ শেফিল্ড শিল্ডের একটি ম্যাচ। বিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যে এ ম্যাচ আয়োজিত হয়েছিল। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে আয়োজিত হয়নি, ঘটনাক্রমে এ ম্যাচটি আয়োজন করা হয়েছিল।

শেফিল্ড শিল্ডের সূচি অনুযায়ী বড়দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর মাঠে গড়ানোর কথা ছিল ম্যাচটি। তবে পরিবারের সাথে বড়দিন কাটাতে পারবেন না বলে নিউ সাউথ ওয়েলস দলের ক্রিকেটাররা মন খারাপ করেন। শেষ পর্যন্ত তাদের দাবি অনুযায়ী, বড়দিনের পরের দিন ২৬ ডিসেম্বর ম্যাচটি শুরু হয়েছিল।

ম্যাচটি ছিল টাইমলেস! তবে মাত্র তিন দিনেই ম্যাচটি শেষ হয়েছিল। ম্যাচটি জিতে নিয়েছিল নিউ সাউথ ওয়েলস। এরপর থেকে প্রতিবছরই দুই রাজ্যের মধ্যে ২৬ ডিসেম্বর আয়োজন করা হতো শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচটি। ১৮৬৫ সালে এটাকে বার্ষিক সূচিতে যুক্ত করে শেফিল্ড শিল্ডের আয়োজকরা।

এর প্রায় ১০০ বছর পর অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হয়েছিল বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ। ১৯৫০-৫১ অ্যাশেজ সিরিজে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বক্সিং ডে টেস্ট! সেই ম্যাচ অবশ্য ২৬ ডিসেম্বর শুরু হয়নি। ম্যাচের সময়সীমা ছিল ২২ থেকে ২৭ ডিসেম্বর। তখনকার সময়ে টেস্ট ম্যাচের মাঝে একদিন বিরতি দেওয়া হতো। তাই তো পাঁচদিন না বলে ছয়দিনের টেস্ট বলাটাই শ্রেয়। ওই সময় চতুর্থদিনের খেলাকে বলা হয়েছিল বক্সিং ডে। দিনটি ছিল ২৬ ডিসেম্বর।

এরও ৩০ বছর পর ১৯৮০ সাল থেকে বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজনের প্রচলন শুরু করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। আর ম্যাচের ভেন্যু হিসেবে সবসময়ই বিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডকেই বেছে নেওয়া হয়।

এর পিছনে একটি মাত্রই কারণ, ইতিহাসের প্রথম বক্সিং ডে ম্যাচ এবং টেস্ট দুইটির ভেন্যু কাকতালীয়ভাবে ছিল মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড।

এর আগে অবশ্য আরও একবার বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজন করেছিল মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ১৯৭৪-৭৫ সালের অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টের ভেন্যু ছিল মেলবোর্ন। কাকতালীয়ভাবে ম্যাচটি শুরুও হয়েছিল ২৬ ডিসেম্বর। অর্থাৎ, বড়দিনের পরের দিন বক্সিং ডে-তে। সব ইতিহাস মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডকেই বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)।

এতো গেলো অস্ট্রেলিয়ায় বক্সিং ডে-র ইতিহাস। বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজনে আরেকটি জনপ্রিয় দেশ হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। আন্তর্জাতিক ইতিহাসে প্রথম বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজন করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

১৯১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বক্সিং ডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ড। ওল্ড সেঞ্চুরিয়নে আয়োজিত হয়েছিল এ ম্যাচ। ইংল্যান্ডের কাছে এ ম্যাচে ইনিংস এবং ১৫৭ রানে হারে প্রোটিয়ারা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে শেষ ক্রিকেট সিরিজ ছিল এই সিরিজ।

বক্সিং ডে কথাটার সাথে বক্সিং খেলার কোনো সম্পর্ক নেই। বক্সিং ডে নামকরণের সাথে মূলত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিনের সম্পর্ক রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বক্সিং ডে নিয়ে।

অনেকেই বলেন বড়দিনে পাওয়া উপহার পাওয়ার সাথে সাথে খোলার সময় পাওয়া যায় না। তাই তো বড়দিনের পরের দিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর উপহারের বক্স খোলা হয়। এ কারণেই দিনটির নাম বক্সিং ডে করা হয়েছে।

তবে অনেকেই এ তত্ত্ব বিশ্বাস করেন না। অনেকেই বলেন, বড়দিনের দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর ঘরের পরিচারকরা অনেক কাজ করেন। এ কারণে তাদেরকে ২৬ ডিসেম্বর পুরষ্কারের বাক্স দেওয়া হয়। এছাড়া এদিন তাদেরকে নিজেদের পরিবরের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেই কারণে বড়দিনের পরের দিনকে বক্সিং ডে বলা হয়।

বৃটিশ ঔপোনিবেশিক অঞ্চলগুলোতে বক্সিং ডে পালন করা হতো। সেই প্রথা অনুযায়ী কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতেই বড় পরিসরে আয়োজন করা হয় বক্সিং ডে টেস্ট।

কমনওয়েলথভুক্ত দেশের বাইরে আয়ারল্যান্ড এবং স্পেনের কাতালান অঞ্চলে ২৬ ডিসেম্বরের রয়েছে বিশেষ ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য। দিনটিকে বলে সেন্ট স্টিফেন’স ডে। এ দিন উপলক্ষে বিশেষ ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও আয়ারল্যান্ডে থাকে প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের ম্যাচ।

শুধু ক্রিকেট নয়, বক্সিং ডে-তে মাঠে গড়ায় ফুটবলও। পুরো বিশ্বজুড়ে ক্রিস্টমাসের কারণে ফুটবল ক্লাবগুলো ফুটবলারদের ছুটি দিলেও, ছুটি বঞ্চিত থাকেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলাররা। বক্সিং ডে-তে মাঠে গড়ায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এক রাউন্ডের ম্যাচ।

Link copied!