কোনো ম্যাচ না থাকায় মূল মাঠেই অনুশীলন করছিল ফরচুন বরিশাল। তখন বেলা গড়িয়ে রাতের আধার হওয়ার অপেক্ষায় প্রকৃতি। সূর্য অস্ত গেলেও দিনের আলো তখনও ছিল চট্টগ্রামের সাগরিকায়। অনুশীলন শেষ হয়েছে বরিশালের।
নেটে শেষ মুহূর্তে কয়েক বল খেলে নিচ্ছিলেন টানা বল করা বোলাররা। যাদের মধ্য সদ্য যোগ দেওয়া পাকিস্তানি পেসার ওয়াসিম জুনিয়রও ছিলেন। আর মাত্রই নেট ছেড়ে যাচ্ছিলেন আরেক পাকিস্তানি ব্যাটার হায়দার আলি।
ঠিক তখন ব্যাট হাতে ডাগআউটের দিকে এগিয়ে এলেন বরিশালের ওপেনার এনামুল হক বিজয়। কিন্তু ব্যাটিং করতে নয় বরং নিজের মোবাইল নিতে এসেছিলেন তিনি। তার হাতে মোবাইল দেখে একজন বলে উঠলেন, ‘কিরে লাইভ হবে নাকি?, উত্তরে আনামুল বললেন, হ্যাঁ, লাইভ সিক্স হিটিং চ্যালেঞ্জ হবে।’
শুনে একটু খটকা লাগলো, কি বললেন এনামুল আর হবেই বা কি। অনুশীলন তো শেষ! চোখ রাখা গেল মাঠের মাঝে। দেখা গেল, ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন সাইফ হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, খালেদ আহমেদ। নেটে ব্যাটিং শেষ করার সরাসরি যোগ দেন হায়দায় আলি।
একটু পর বোঝা গেল, আসলে কি হতে যাচ্ছে। নিয়ম ছিল, প্রত্যেকে তিনটি করে ছক্কা হাঁকাবেন। যে সবচেয়ে বড় ছক্কা মারতে পারবেন তাকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হবে। বিজয়ী নির্ধারণ করার দায়িত্বে ছিলে ফরচুন বরিশালের হেড কোচ নাজমুল আবেদীণ ফাহিম।
শুরুটা করলেন হায়দার আলি। এরপর ফজলে মাহদুম রাব্বিও মারলেন গোটা কয়েক ছক্কা। মাঠের মাঝে যখন ছোট ভাইয়ের সিক্স হিটিং চ্যালেঞ্জে মত্ত, তখন ডাগআউটে বসেছিলেন বড়ভাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
তবে বেশিক্ষণ অবশ্য বসে থাকতে পারেননি। প্রতিযোগিতার মাঝপথেই যোগ দেন রিয়াদ। ততক্ষনে অবশ্য ফিজিও ও অন্যতম কোচ মিজানুর রহমান বাবুল হাঁকডাক শুরু করেছেন।
ক্রিকেটারদের খেলা বন্ধ করতে বলছেন। আগামীকাল ম্যাচ আছে বলেও সতর্ক করে দেন তাদের। তবে ক্রিকেটাররা অবশ্য প্রতিযোগীতা শেষ করেছেন।
খালি চোখে মনে হচ্ছিল লড়াইটা হবে রিয়াদ ও হায়দারের মধ্যে। তবে তাদের কেউ নন এই লড়াই জিতেছেন এমন একজন যিনি চলতি বিপিএল এখনও মাঠে নামারই সুযোগ পাননি।
তবে সাইফ হাসানকে এই প্রতিযোগিতা জিততে টেক্কা দিতে হয়েছে এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে। খালি চোখে সাইফের চেয়ে বিজয়ের ছক্কাগুলোকে বেশি বড় মনে হয়েছে।
বিচারক ফাহিম সেটা মেনে নিলেও সাইফকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। কারণ, সবাই যেখানে জায়গায় দাঁড়িয়ে শট খেলেছেন সেখানে বিজয় স্টেপ আউট করেছেন প্রতি শটে।
তবে এতে বিজয়ী যেই হোক, উল্লাস করেছেন সবাই। বিজয়ের উল্লাসটা যেন একটু বেশিই ছিল। হয়তো এই প্রতিযোগিতার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনিই।
এটা আসলেই কোনো সিরিয়াস বা বানিজ্যিক প্রতিযোগীতা নয়। নিজেদের মধ্যে মজা করার উদ্দেশ্যেই এই সিক্স হিটিং প্রতিযোগিতা হয়েছিল।
চলতি আসরে প্রথম ম্যাচ হারলেও এরপর টানা তিন ম্যাচ জিতেছে বরিশাল। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সামনে থেকে নেত্বতৃ দিচ্ছেন দলকে। দেশি ও বিদেশি দারুণ খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে বরিশাল দল যেন সুখী পরিবারে প্রতিচ্ছবি।