হা ডু ডু বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। এর আরেক নাম কাবাডি। উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা এটি। বর্তমানে কাবাডি আন্তর্জাতিকভাবেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়েছে।
১৯৭৮ সালে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় প্রথম এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে আস্তে আস্তে কাবাডি খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কাবাডির ক্ষেত্রে অনেকগুলো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা রয়েছে। নিচে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
কাবাডি বিশ্বকাপ
আদর্শ পদ্ধতির কাবাডি বিশ্বকাপটি আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের (আইকেএফ) মাধ্যমে পরিচালিত একটি বহিরঙ্গন আন্তর্জাতিক কাবাডি প্রতিযোগিতা, যাতে জাতীয় পুরুষ এবং মহিলা দলগুলির প্রতিদন্দ্বিতা করে। প্রতিযোগিতাটি এর আগে ২০০৪, ২০০৭ এবং ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সবগুলো টুর্নামেন্ট ভারত জিতেছে। ওয়ার্ল্ড কাবাডি ফেডারেশন নামে একটি নতুন কাবাডি সংস্থা প্রতিষ্ঠার পরে, ২০১৯ সালে মালয়েশিয়ার মালাক্কায় বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়। এটি কাবাডি ইতিহাসের বৃহত্তম বিশ্বকাপ, যেখানে ৩২ টি পুরুষ দল অংশগ্রহণ করে এবং পাকিস্তান বিজয়ী দল হিসেবে ঘোষিত হয়।
এশিয়ান গেমস
১৯৯০ সাল থেকে এশিয়ান গেমসে কাবাডি খেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় দল এশিয়ান গেমসে প্রতিটি পুরুষ এবং নারীদের কাবাডি প্রতিযোগিতা জিতেছিল। ২০১৮ এশিয়ান গেমসে, ইরান ভারতের বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে কাবাডিতে স্বর্ণ পদক জিতেছিল, ভারত পুরুষ দল ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল, এবং ভারতের নারী দল রৌপ্য জয় করেছিল।
প্রো ইন্ডিয়ান কাবাডি লিগ
প্রো কাবাডি লিগটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিপণনে স্থানীয় ব্রডকাস্টার স্টার স্পোর্টসের সমর্থন এবং খেলাধুলার নিয়মাবলী এবং তার উপস্থাপনা পরিবর্তন করে এটি টেলিভিশনের দর্শকদের জন্য আরও উপযুক্ত করাতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে তার ব্যবসায়ের মডেল করেছে।
কাবাডির জনপ্রিয়তা
এটি উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় খেলা। কাবাডি ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (কেএফআই) ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি একটি আদর্শ পদ্ধতি সংকলন করেছিল। পাকিস্তানের কাবাডির পরিচালনার জন্য কমিটি হল পাকিস্তান কাবাডি ফেডারেশন। বাংলাদেশে খেলাটি হা-ডু-ডু নামে পরিচিত, যা কাবাডির সঙ্গে ভিন্নতা রয়েছে, যা প্রাচীন কালে ফিরে আসে। হা-ডু-ডু এর কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আইন দিয়ে খেলা হয়। কাবাডি হল বাংলাদেশের জাতীয় খেলা, ১৯৭২ সালে অফিসিয়াল স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের অপেশাদার কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়েছিল।
খেলার নিয়মাবলী
মাঠ
কাবাডি খেলার বালকদের মাঠ লম্বায় ১২ দশমিক ৫০ মিটার এবং চওড়ায় ১০ মিটার হয়। বালিকাদের কাবাডি খেলার মাঠ লম্বায় ১১ মিটার এবং চওড়ায় আট মিটার হয়। খেলার মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি লাইন টানা থাকে যাকে মধ্যরেখা বা চড়াই লাইন বলে। এই মধ্য রেখার দুই দিকে দুই অর্ধে দুটি লাইন টানা হয় যাকে কোল লাইন বলে। মৃত বা আউট খেলোয়াড়দের জন্য মাঠের দুই পাশে এক মিটার দূরে দুটি লাইন থাকে যাকে লবি বলা হয়।
সদস্য
প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতি দলের সাতজন খেলোয়াড় একসঙ্গে মাঠে নামে। বাকি পাঁচজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। খেলা চলাকালীন সর্বাধিক তিনজন খেলোয়াড় পরিবর্তন করা যাবে।
সময়
পাঁচ মিনিট বিরতিসহ দুই অর্ধে পুরুষদের ২৫ মিনিট করে এবং মেয়েদের ২০ মিনিট করে খেলা হবে। খেলা শেষে যেই দল বেশি পয়েন্ট পাবে সেই দলই জয়ী হবে। দুদলের পয়েন্ট সমান হলে দুই অর্ধে আরও ৫ মিনিট করে খেলা হবে। এরপরেও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তবে যে দল প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছিল সে দলই জয়ী হবে।
পয়েন্ট
যদি কোনো খেলোয়াড় মাঠের বাহিরে চলে যায় তাহলে সে আউট হবে। এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল একটি লোনা (অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট) পাবে। মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড়কে (একাধিক হতে পারে) স্পর্শ করে এক নিঃশ্বাসে নিরাপদে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসতে পারলে, যাদেরকে স্পর্শ করবে সে বা তারা কয়জনই আউট হবে। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট পাওয়া যাবে।
সতর্কতা
এক নিঃশ্বাসে স্পষ্টভাবে বার বার কাবাডি বলে ডাক দেওয়াকে ‘দম নেওয়া’ বলে। এই দম মধ্যরেখা থেকে শুরু করতে হবে। বিপক্ষ কোর্টে একসঙ্গে একাধিক আক্রমণকারী যেতে পারবে না। কোন আক্রমণকারী বিপক্ষ দলের কোর্টে দম হারালে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে স্পর্শ করতে পারলে সে আক্রমণকারী আউট বলে গণ্য হবে।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া