• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে গুগল


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩, ০১:৩৬ পিএম
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে গুগল
ছবি: সংগৃহীত

গুগলের ২৫ বছর হতে যাচ্ছে চলতি মাসে। ১৯৯৮ সালে ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন গুগল প্রতিষ্ঠার পর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। এ সময় এসছে প্রযুক্তি জগতে অনেক পরিবর্তন। ফলে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে এক নতুন প্রযুক্তিগত পেক্ষাপটে খুঁজে পাচ্ছে।

শুরুতে গুগল শুধুমাত্র একটি সার্চ ইঞ্জিন ছিল। প্রথম কয়েক মাস প্রতিষ্ঠানটি সুসান ওজসিকির গ্যারেজে থেকে কার্যক্রম চালায়। প্রসঙ্গত, সুসান বর্তমানে ভিডিও শেয়ার প্লাটফর্ম ইউটিউবের প্রধান।

সেই সার্চ ইঞ্জিনটি কতটা ভালো কাজ করেছে তা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। ১৭ বছর হয়ে যাচ্ছে গুগল শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে অভিধানে প্রবেশ করার।

গুগল এখন এলফাবেট নামক একটি বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানের অংশ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রযুক্তির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বৈচিত্র্য এনেছে গুগল। একই সাথে প্রযুক্তির অনেক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমান বিশ্বে সবচে আলোচিত প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। আর এই মুহুর্তে গুগল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে। তবে অনেকেই ধারণা করছেন প্রতিষ্ঠানটি এ দৌড়ে ইতোমধ্যে পিছিয়ে পড়েছে।

ইমেইল ও স্মার্টফোন, সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যার, চালকবিহীন গাড়ি, ডিজিটাল সহকারী, ইউটিউবসহ অসংখ্য পণ্য ও পরিষেবা তৈরি এবং অনেক সময় অধিগ্রহন করেছে গুগল। যদিও তাদের সব প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
‘কিল্ড বাই গুগল’ ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ি ২৮৮টি প্রকল্প গুগল বন্ধ করে দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে গেমিং প্ল্যাটফর্ম স্টাডিয়া এবং বাজেট ভিআর হেডসেট গুগল কার্ডবোর্ড।

এখন প্রশ্ন হল দ্রুত বিকশিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশ্বে গুগল তার উপস্থিতি বজায় রাখতে পারবে কিনা। প্রতিষ্ঠানটির ভেতরের মানুষসহ অনেকেই ধারণা করছেন প্রতিষ্ঠানটি পিছিয়ে পড়েছে। এক গুগল প্রকৌশলীর ফাঁস হওয়া মেমো নোটে দেখা যায় তিনি বলেছেন যে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত গোপন অস্ত্র নেই এবং এই নতুন প্রযুক্তিতে প্রাধান্য বিস্তারের অবস্থায়ও নেই তারা।

অনেকের জন্য প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া ও প্রভাবিত হওয়ার প্রথম মাধ্যম ছিল চ্যাট জিপিটি। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবটটি ২০২২ সালের নভেম্বরে বিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর নির্মাতা ওপেনএআই আরেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফ্ট থেকে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে।

চ্যাটজিপিটিকে বলা হচ্ছে ‘গুগল হত্যাকারী’। কারণ এটি অনুসন্ধানের ফল একবারেই প্রদান করতে পারে। যেখানে গুগল পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠার তথ্য উপস্থাপন করে।

পরবর্তীতে গুগল তাদের নিজস্ব চ্যাটবট ‘বার্ড’ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে উম্মুক্ত করে। তবে এই চ্যাটবটটি ব্যবহারকারীদের মাঝে তেমন কোনো সাড়া ফেলতে পারেনি।

চ্যাটবটের উৎপত্তি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল বা এলএলএম থেকে। গুগলের একটি এলএলএম হলো ল্যাম্বডা। প্রতিষ্ঠানটির এক প্রকৌশলী দাবি করেন ল্যাম্বডা মানুষের মতো অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে। তবে গুগল দাবি করে ল্যাম্বডা মানুষের অণুকরণে বার্তা তৈরি ছাড়া আর বেশি কিছু করছে না এবং ওই প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্ত এ ঘটনা বিশ্বের মানুষের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয়।

গুগল নিশ্চিতভাবেই হাল ছেড়ে দেয়নি। মে মাসে আইও ডেভেলপার কনফারেন্সে প্রতিষ্ঠানটি ২৫টি নতুন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা চালিত পণ্য নিয়ে হাজির হয়। এক বিবৃতিতে তারা নিজেদের এআইয়ের দুনিয়ায় অগ্রসরমান বলে ঘোষণা করে।

ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজি নামব এক ফার্মের বিশ্লেষক ক্যারোলিনা মিলানেসি এতো দ্রুত গুগল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৌকা ধরতে পারেনি বলতে রাজি নন। তিনি বলেন, “ভোক্তা ও এন্টারপ্রাইজ উভয় দিকেই এআই-তে গুগলের জন্য সুযোগ রয়েছে।”

বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হারগ্রিভস ল্যান্সডাউনের অর্থ ও বাজারের প্রধান সুসান্নাহ স্ট্রিট এ ব্যাপারে একমত হন। তিনি যুক্তি দেন, গুগলের এআই ব্যবসার অস্ত্র তার সফল ক্লাউড ব্যবসার মধ্যে থাকতে পারে। ক্লাউড কোম্পানিগুলি কম্পিউটারের বিশাল নেটওয়ার্ক এবং প্রসেসিং পাওয়ারের প্রবেশাধিকার দেয়। যা বেশিরভাগ কোম্পানির নিজস্ব মালিকানায় রাখা সম্ভব হয় না।

তবে গুগল এখনও মানুষের জবিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাংবাদিক টিম ডাউলিং একবার এক সপ্তাহের জন্য গুগলের ভোক্তা পরিষেবাগুলো ব্যবহার না করার অবস্থা বর্ণণা করেছিলেন। তিনি সেই অবস্থায় ভ্রমণের আয়োজন করার চেষ্টাকে ‘মোমবাতির আলোয় কেনাকাটার মতো’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

যদি গুগলের কৃত্তিম বুদ্ধমত্তার পণ্যগুলির অল্প কিছুও একইভাবে নিজেদেরকে মানুষের জীবনের অংশ হিসাবে তুলে ধরতে পারে, তবে প্রতিষ্ঠানটির পথ চলা আরও বহুদিন ধরেই চলবে বলে ধারণা করা যায়। 

বিবিসি অবলম্বনে

Link copied!