• ঢাকা
  • বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

আজ রাতের আকাশে দেখা যাবে বছরের সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল সুপারমুন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ০৯:০৫ পিএম
আজ রাতের আকাশে দেখা যাবে বছরের সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল সুপারমুন

আজ সন্ধ্যায় আকাশে চোখ রাখতেই হবে। কেন জানো? কারণ, আজ রাতটা আকাশপ্রেমীদের জন্য হতে চলেছে বছরের সেরা রাত। চাঁদ মামাকে আজ দেখা যাবে তাঁর সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সোনালি রঙে ঝলমলে চেহারায়। যাকে বলা হয় সুপারমুন।

মহাকাশ সংস্থা নাসা জানিয়েছে, চাঁদ আজ পৃথিবীর এত কাছে চলে আসবে যে সাধারণ দিনের চেয়ে এটিকে দেখাবে প্রায় ১৪ শতাংশ বড় ও ৩০ শতাংশ বেশি উজ্জ্বল। চাঁদের এত কাছের এই বিরল দৃশ্য শেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে। বোঝাই যাচ্ছে, এমন দৃশ্য সহজে দেখা যায় না। তাই, ঘরে বসে না থেকে এই দারুণ মহাজাগতিক মুহূর্তটি উপভোগ করতে তৈরি থেকো আজ সন্ধ্যায়।

বাংলাদেশ থেকে চাঁদের পূর্ণিমার রূপ পুরো দেখা যাবে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১৯ মিনিটে। এ সময়ের মধ্যে চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের বিন্দুতে পৌঁছাবে। যাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় ‘পেরিজি’ বলা হয়। তখন পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব থাকবে মাত্র ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৩৩ কিলোমিটার।

তবে এই সুপারমুনের ৯৮ শতাংশের বেশি আলো আগামীকালও দৃশ্যমান থাকবে। তাই এটি বৃহস্পতিবারও প্রায় পূর্ণ চাঁদের মতোই দেখাবে। ফলে আগামীকালও এই বিশাল ও উজ্জ্বল রূপ উপভোগ করা যাবে।

মূলত চাঁদ যখন তার কক্ষপথে ঘোরার সময় পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের বিন্দুতে চলে আসে, তখন সেই ঘটনাকে সুপারমুন বলা হয়। আসলে সুপারমুন কিন্তু বছরে বেশ কয়েকবার দেখা যায়। চলতি বছর প্রথম সুপারমুন দেখা গিয়েছিল ৭ অক্টোবর। আর এই বছরের শেষ সুপারমুন দেখা যাবে ৪ ডিসেম্বর।

সুপারমুনের কারণে চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছে চলে আসে। এর ফলে জোয়ার–ভাটার ওপর বড় প্রভাব পড়ে। চাঁদ সব সময়ই জোয়ার–ভাটা ঘটায়। তবে যখন সুপারমুন হয়, তখন এটিকে ‘ভরা কটাল’ (King Tide) বলা হয়। এই জোয়ারের সময় পানি অনেক উঁচুতে চলে আসে। যা সাধারণত বছরে মাত্র একবার বা দুবার দেখা যায়। এটি তখন ঘটে যখন সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী একদম সোজা লাইনে চলে আসে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এ বছর এই রাজার জোয়ারের ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর পশ্চিম অঞ্চল ও বিশেষ করে ফ্লোরিডায় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বন্যা বা প্লাবনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নভেম্বর মাসের এই পূর্ণিমাকে ‘বিভার মুন’ নামেও ডাকা হয়। এর নামকরণের পেছনে দুটি কারণ প্রচলিত আছে। প্রথমত এই মাসে আদিবাসী আমেরিকানরা বিভার ধরার ফাঁদ পাততেন। আর দ্বিতীয়ত, এটি শীত আসার আগে বিভারদের বাঁধ তৈরির ব্যস্ততাকে বোঝায়। বিভার হলো একধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী, যা দেখতে ইঁদুর বা কাঠবিড়ালির মতো; কিন্তু আকারে বেশ বড়। বিভাররা বাঁধ তৈরির দক্ষতার জন্য বিখ্যাত। এরা গাছের ডাল, কাদা ও পাথর ব্যবহার করে নদী বা ছোট জলাশয়ে শক্ত বাঁধ তৈরি করে।

বছরের এই বিশাল ও উজ্জ্বল সোনালি চাঁদ বা সুপারমুন দেখার জন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। বিশাল ও উজ্জ্বল সোনালি এই চাঁদকে তার সেরা রূপে দেখতে হলে সন্ধ্যা নামার পরে পূর্ব আকাশে চোখ রাখতে হবে। কারণ, এ সময়ে চাঁদ দিগন্তের কাছাকাছি থাকায় এটিকে আকারে অনেক বড় দেখায়। এ ছাড়া দিগন্তের কাছে বায়ুমণ্ডলের ঘন স্তর ভেদ করে যখন চাঁদের আলো আমাদের চোখে পৌঁছায়, তখন তা একটু কমলা বা সোনালি আভা সৃষ্টি করে। যা সুপারমুনের সৌন্দর্যকে আরও মোহনীয় করে তোলে।

সে জন্য তোমার চাঁদ দেখায় যাতে কোনো উঁচু বিল্ডিং বা গাছপালা বাধা না হয়, সে জন্য একটা খোলা জায়গায় যাও। বাড়ির ছাদ, খেলার মাঠ, নদী বা সাগরের পাড় সবচেয়ে ভালো। রাস্তার আলো, ল্যাম্পপোস্ট বা বাড়ির অন্য কৃত্রিম আলো থেকে যতটা পারো দূরে থাকো। আলো কম থাকলে চাঁদের আসল উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য তুমি ভালোভাবে দেখতে পারবে। চাঁদ যত ওপরে ওঠে, একে তত ছোট্ট মনে হতে থাকে। তাই সন্ধ্যা হওয়ার ঠিক পরেই যখন চাঁদ ওঠে, সেই প্রথম মুহূর্তটা একদম মিস করবে না। কারণ, তখনই ‘মুন ইলিউশন’–এর কারণে চাঁদকে সবচেয়ে বড় দেখায়।

সুপারমুন দেখার জন্য তোমার কোনো বড় যন্ত্রপাতির দরকার নেই। খালি চোখেই দারুণ দেখা যাবে। তবে যদি তোমার কাছে দুরবিন বা ছোট টেলিস্কোপ থাকে তবে চাঁদের গায়ে থাকা গর্তগুলো আরও কাছ থেকে দেখতে পারবে। যদি আকাশ মেঘলা থাকে, তবে চাঁদ দেখা কঠিন হবে। তাই ঘর থেকে বের হওয়ার আগে একবার আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিও।

সূত্র: স্পেস ডটকম, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ওয়াশিংটন পোস্ট

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক


 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের আরো খবর

Link copied!