• ঢাকা
  • শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৫ জ্বিলকদ ১৪৪৬

মেটাভার্স, ভার্চুয়াল এক জগৎ!


ইশতিয়াক হোসেন
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২১, ০২:২৬ পিএম
মেটাভার্স, ভার্চুয়াল এক জগৎ!

কোভিড মহামারির সময় আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। জীবিকা থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, সব ক্ষেত্রেই এসেছে কৌশলগত পরিবর্তন। সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্বকে কঠোরভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। ঘরে বসে চলেছে শিক্ষার্থীদের অনলাইন লেখাপড়া। চিকিৎসাসেবাও অনলাইনে দিয়েছেন ডাক্তাররা। বাসা থেকে অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

জীবনযাত্রার এসব পরিবর্তন কিছু অসুবিধার পাশাপাশি সুবিধার বিশাল দরজাও খুলে দিয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার প্রস্তুতি, রাস্তায় চলাচলের বিড়ম্বনা তো রয়েছেই। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা ব্যয় ইত্যাদি চিন্তা করলেই ধারণা করা যায়, কী পরিমাণ জাগতিক শক্তি এসবের জন্য প্রয়োজন। এখন অন্যভাবে চিন্তা করুন, এসবই যদি ভার্চুয়ালি করা যায়, তবে তা কেমন হবে?

মানে বিদ্যালয়, অফিস আদালত, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, হাটবাজার মার্কেট সব ডিজিটাল ইট কাঠে তৈরি ভার্চুয়াল জগতেই অবস্থিত। আপনিও এই ভার্চুয়াল জগতে বিচরণসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। কিন্তু বাস্তবিক অস্তিত্বের পরিবর্তে তা হবে আপনার ভার্চুয়াল অবতারের মাধ্যমে। 

ধারণাটি কিন্তু একেবারেই নতুন নয়। যারা ভিডিও গেম খেলেন তাদের কাছে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি অনেক আগ থেকেই পরিচিত। বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় এই ভার্চুয়াল রিয়্যালিটিকে কাজে লাগিয়ে খ্যতনামা সব সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাদের সেবাসমূহে নতুন ধারনার পুনর্বিন্যাশ করছে। এই নতুন ধারনার একটি হচ্ছে "মেটাভার্স"।

‘মেটা’ এবং ‘ভার্স’ একত্রে মিলিয়ে হয়েছে ‘মেটাভার্স’। যার অর্থ যথাক্রমে ইংরেজিতে ‘বিয়ন্ড’ এবং ইউনিভার্স শব্দের শেষের অংশ ‘ভার্স’। 'মেটাভার্স'কে বাংলায় বলা যায় অতিলোক বা অতিজগত। মেটাভার্সকে অনেকে আবার ইন্টারনেটেরই পরবর্তী সংস্করণ বলছেন।

আধুনিক সংস্করণ ‘মেটাভার্স’-এ ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহৃত কিছু উপাদান থাকবে। যেমন ভিডিও কনফারেন্স, ক্রিপ্টো কারেন্সি, ই মেল, সোশ্যাল মিডিয়া, সরাসরি সম্প্রচার ব্যবস্থা ইত্যাদি। এসব প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই বিকশিত হচ্ছে।

প্রযুক্তিবিদরা মনে করেন, এই ক্রমবিকাশই  ইন্টারনেটকে ‘মেটাভার্স’ এ পরিবর্তন করবে। ‘মেটাভার্স’- এ আরো থাকবে ব্যবহারকারী এবং যন্ত্রের মধ্যে সংযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেন, কম্পিউটার ভিশন, এজ-ক্লাউড কম্পিউটিং এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক।

মেটাভার্সের এই উপাদানগুলো বিভিন্ন মাধ্যম যেমন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠার করার মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও কার্যকরী বাস্তুতন্ত্র তৈরি করে। এখন এর সঙ্গে ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়্যালিটি যুক্ত করলেই ‘মেটাভার্স’ নামক বাস্তুতন্ত্রে আপনার প্রবেশ ও অবস্থান নিশ্চিত হয়ে যাবে। 

বিকল্প ডিজিটাল জগতে কী কী সুযোগ সুবিধা থাকছে? উদাহরণস্বরূপ বলা যায় শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা কেনাকাটা ঘোরাফেরা ইত্যাদি সব সুবিধাই থাকছে এতে।

ধরুন, একটি ওয়াশিং মেশিন কিনবেন। ঘরে বসে অনলাইনে বিভিন্ন রকম ওয়াশিং মেশিন দেখলেন। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছেন না। মেটাভার্সে এই অনলাইনের সীমাবদ্ধতা থাকবে না। কম্পিউটারে সংযুক্ত একটা চশমা পরে নিলেই চলে যাবেন ওয়াশিং মেশিনের দোকানে। বিশেষ ডিজিটাল দস্তানার মাধ্যমে স্পর্শ অনুভুতিও পেয়ে যাবেন সহজেই। এমনকি ঘ্রাণ পাওয়ারও ব্যবস্থা থাকবে।

জামার দোকানে গিয়ে পছন্দের জামাটি পরে দেখা যাবে। কেমন লাগছে তা যাচাই করেই কেনা যাবে। এসব কিছুই সম্ভব হচ্ছে বিকল্প জগত মেটাভার্সে।

বিশ্বের বড় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে দিনরাত্রি কাজ করে যাচ্ছে এই প্রযুক্তির চালুর উদ্দেশ্যে। তবে আজকালের মধ্যে মেটাভার্স তৈরি সম্ভব হবে না বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি তৈরিতে লাগবে আরও ১৫ থেকে ২০ বছর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেটাভার্সকে বাস্তবিক রূপ দিতে হলে আরও বেশ খড়কুটো পোড়াতে হবে। যেমন উচ্চমাত্রার ব্যান্ডউইথ, ৫জি, উন্নতমানের ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।

মেটাভার্স-এর কারণে ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে শেষ করা কঠিন। তবে এই প্রযুক্তি চালু হলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কাজের ব্যস্ততায় কিংবা রাস্তার বিড়ম্বনা এড়িয়ে এখন সরাসরি ক্রিকেট খেলা অথবা কেনাকাটা কিংবা বাচ্চার বিনোদন আর মিস হবে না।

Link copied!