সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসছে পরিবর্তন। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় বিজ্ঞাপনদাতারা আগে ‘টার্গেটিং অপশন্স’-এর একটা তালিকা পেতেন। সেখান থেকে তাদের পছন্দমতো লক্ষ্য-গোষ্ঠী নির্ধারণ করা যেত সহজেই।
এবার ফেসবুক ঠিক করেছে সেই সবিস্তার ‘টার্গেটিং’ সুবিধাটাই বন্ধ করে দেবে। যার ফলে বিজ্ঞাপনদাতারা আর ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর জাতি, লিঙ্গ, যৌন অভিরুচি, ধর্ম, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা মতো বিষয়বস্তু লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মাতৃ-প্রতিষ্ঠান মেটা বলছে, আগামী জানুয়ারি থেকেই বিজ্ঞাপনের এ ‘টার্গেটিং অপশন্স’ বন্ধ করা হবে, যা বদলে দেবে বিজ্ঞাপনী মাধ্যমেরই চালচিত্র।
ব্যবহারকারীদের অ্যাক্টিভিটি বা প্রোফাইল ফিল্টার করে সে অনুযায়ী তাদের ‘ক্লাসিফাই’ করত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম। তারপর সেই তথ্য দিত বিজ্ঞাপনদাতাদের। ফলে সহজেই তারা কাঙ্ক্ষিত ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছুতে পারতেন।
মেটা প্ল্যাটফর্মসের প্রোডাক্ট মার্কেটিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্রাহাম মাড এক ব্লগ পোস্টে বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনদাতারা যেভাবে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছুতে চায়, সেটির সঙ্গে ব্যবহারকারীদের প্রত্যাশাকে আরও ভালোভাবে মেলাতে চাই আমরা। এছাড়া নাগরিক অধিকার বিশেষজ্ঞ, নীতি নির্ধারক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা টার্গেটিং অপশন অপব্যবহার রোধ করতে চাই।
টেক ট্রান্সপারেন্সি প্রজেক্টের গবেষণা অনুসারে, গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে আক্রমণের ঘটনার পরও ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে উসকানিমূলক আলোচনার পাশে অস্ত্রের আনুষঙ্গিক এবং বডি আর্মারের বিজ্ঞাপন পরিবেশন করা হয়েছিল।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, মেটার মোট আয়ের ৯৮ শতাংশই আসে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে। বিজ্ঞাপনদাতারা এই প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট জনসংখ্যা এবং ভোক্তাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদের অনলাইন কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করে প্রোফাইল তৈরি করে রেখেছে। মেটা তাদের মেসেঞ্জার অ্যাপের মাধ্যমেও বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে। এ অডিয়েন্স নেটওয়ার্কের মাধ্যেম তৃতীয় পক্ষের অ্যাপেও বিজ্ঞাপন বিক্রি করে থাকে
প্রসঙ্গত, প্রতিদিন ২০০ কোটি মানুষ ফেসবুক অ্যাপ ও ৫০ কোটি মানুষ ইনস্টাগ্রাম অ্যাপ ব্যবহার করেন। ফলে শুধু গত বছরেই মেটা আয় করেছে ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মেটা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, তারা যদি বিজ্ঞাপনদাতাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে না দেয়, তবে তা রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজকের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের কর্মসূচির বেশির ভাগ ফেসবুকের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে।
গ্রাহাম মাড বলেন, “আমাদের কিছু বিজ্ঞাপন অংশীদার এই টার্গেটিং অপশন বাদ যাওয়ার বিষয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন৷ কেননা তারা মনে করেন, ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন তৈরিতে সহায়তা করত এটি। তবে অনেকেই টার্গেটিং অপশন অপসারণের সিদ্ধান্তের বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।”