বিশ্বের দেশে দেশে নানামুখী সংকট ও বিপর্যয়ের মধ্যে নতুন করে এক সংকট দেখা দিয়েছে। শনিবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সশস্ত্র উইং আল‑আকসা ব্রিগেড এবং ইসলামিক জিহাদ নামে দুটি সংগঠনের যুগপৎ হামলায় পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট ইসরায়েলের ৯ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আড়াই হাজার ইসরায়েলি আহত এবং শতাধিক জিম্মি হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা জিম্মি ইসরায়েলিদের হামাস‑নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় নিয়ে গেছে। এরপর থেকেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকা লক্ষ্য করে অব্যাহতভাবে নির্বিচার বিমান ও ট্যাংক দিয়ে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে জঙ্গলের পশুর স্বভাব ধারণ করে এ ধরনের উন্মত্ত ও হিংস্র হামলার নজির পাওয়া যায় না। ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় শত শত বেসামরিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটছে; ঘরবাড়ি, মসজিদ, হাসপাতাল ও শিশুদের স্কুল শক্তিশালী বোমার আঘাতে ধুলোয় মিশে যাচ্ছে। সুস্থ মানুষের পক্ষে এই পরিস্থিতি অবলোকন করা সত্যিই খুব হৃদয়বিদারক। ইঙ্গো‑মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রত্যক্ষ মদদ ও উসকানিতে স্বাধীনতা ও ইসরায়েলের অত্যাচার থেকে মুক্তির দাবিদার ফিলিস্তিনিদের এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যু সভ্য সমাজের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্মীয়সহ নানা কারণে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ যুগ যুগ ধরেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। কিন্তু ইঙ্গো‑মার্কিন মদদে ইসরায়েল সভ্য দুনিয়ার সব আইন অমান্য করেও বহাল তবিয়তে টিকে থাকা সংকটময় পৃথিবীতে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পাল্টে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সব পথ বন্ধ করে দিয়ে খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের ন্যূনতম সুযোগটুকু না রেখে ইসরায়েলের বিরতিহীনভাবে মুহুর্মুহু হামলায় অনেক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন। কারণ, ইউক্রেন‑রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপে বছর দুয়েক ধরেই যুদ্ধপরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই অবস্থায় ফিলিস্তিনির চিরকালীন বন্ধু ও মুসলিম‑অধ্যুষিত বিশ্বের অন্যতম রাষ্ট্র বাংলাদেশের কী করণীয়, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা এখন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশকে এখন চার‑পাঁচ বছর ধরে চলমান বিশ্ব ভূ‑অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত অভিঘাতের মধ্যে তেলের মূল কেন্দ্র মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট নতুন এই মহাসংকট থেকে দ্রুত নিজেকে রক্ষা করতে হবে এবং একই সঙ্গে কীভাবে গাজা উপত্যকার মুসলমানদের কেয়ামতসম এই বিপদের দিনে সহায়তা করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে হবে। নজিরবিহীন এই মহাসংকটের সময় বীরের জাতি হিসেবে পরিচিত বাঙালিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের যেকোনো উদ্যোগকে নিশ্চয়ই নির্দ্বিধায় সমর্থন দেবে। কারণ, পাশ্চাত্য দেশগুলোর ষড়যন্ত্রে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের পশুর মতো এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কারণ, ইসরায়েলকে নগ্নভাবে সমর্থন ও লালন-পালনকারী পাশ্চাত্য এই দেশগুলো ইদানীং বাংলাদেশের পেছনেও উঠেপড়ে লেগেছে।
অনেকের হয়তো জানা নেই, ফিলিস্তিনির চিরকালীন বন্ধু বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও পাশ্চাত্য বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে সময় অকুতোভয় সাহস নিয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ৩৩ দিনের মাথায় ইসরায়েল সবার আগে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস করেছিল। পাকিস্তানিদের নিধনযজ্ঞের হাত থেকে বাঁচানোর প্রলোভন দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বাংলাদেশকে ইসরায়েলের ওই স্বীকৃতি মেনে নিতে বলেছিল এবং পরে হুমকি ও চাপ দিয়েছিল। অসম সাহসী বঙ্গবন্ধু ঘৃণাভরে ওই স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল যে কোনো রাষ্ট্র নয়, সে কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও উচিত গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের জন্য যা যা করণীয়, তা করা। কারণ, গাজা উপত্যাকার মুসলমানদের ওপর ইহুদিবাদীদের চলমান নিধনযজ্ঞকে শুধু জঙ্গলের পশুর পৈশাচিকতার সঙ্গে তুলনা করা যায়। তা ছাড়া ইসরায়েলের মূল মদদদাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পাশ্চাত্য দেশগুলো সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশকে নানা হুমকি‑ধমকি দিচ্ছে। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ দেওয়া বাংলাদেশ যে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে, তা হয়তো পাশ্চাত্য এই দেশগুলোর সহ্য হচ্ছে না।
সাহসী হিসেবে পরিচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের উচিত, এই সুযোগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইঙ্গ‑মার্কিনদের সাম্প্রতিক অপতৎপরতার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার জন্য কঠোর নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা। মনে রাখা উচিত, অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা এবং রপ্তানি ও জনশক্তি থেকে আয়ের সুযোগ বন্ধ করার হুমকি দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য পাশ্চাত্য দেশগুলোর অপতৎপরতার লাগাম টেনে ধরার এটাই উৎকৃষ্ট সময়। জনগণের ধর্মীয় চেতনাকে কাজে লাগিয়ে পাশ্চাত্য দেশগুলোর ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য সরকারের জন্য এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
নাগরিক হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে, শত ঝড়‑বিপর্যয়‑প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালি জাতির ঘুরে দাঁড়ানোর অসামান্য শক্তির কথা বিশ্ববিদিত। কাজেই বাংলাদেশের হারানোর কিছু নেই। অর্থনীতিতে এখন সংকট চলছে। পাশ্চাত্য অপশক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে হয়তো অর্থনীতিতে আরেকটু বিপর্যয় আসবে। বৃহত্তর স্বার্থে দেশপ্রেমিক বাঙালিরা নিশ্চয়ই তা মেনে নেবে। কারণ, গাজা উপত্যকার মানুষকে চারদিক থেকে সবকিছু বন্ধ করে, অবরুদ্ধ করে এভাবে কুকুর‑বিড়ালের মতো হত্যা করা অসম সাহসী বাঙালি জাতি মেনে নিতে পারে না, মেনে নেওয়া উচিত নয়। কেননা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির চরমতম দুর্দিনেও আমাদের মাথা উঁচু করে সত্যর পথে অবিচল থাকতে শিখিয়ে গেছেন। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণার দিন কয়েক পরেই ইসরায়েলকে দখলদার হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর মাহাত্ম্য মুছে দেওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের এখনকার মানুষের অনেকের হয়তো তাই জানা নেই যে ইসরায়েলের বর্বর স্বভাব ও চরিত্রের বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থান কেমন হবে, তা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনাতেই বিশ্ববাসীকে সদর্পে জানিয়ে দিয়েছিলেন। শূন্য হাতে এবং যুদ্ধে পুরোপুরি বিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য ইসরায়েলের পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে ‘ইসরায়েল রিকগনাইজ বাংলাদেশ’ শীর্ষক চিঠি এবং অর্থ, ওষুধ ও অন্যান্য সহায়তা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী হওয়ার আগেই ইসরায়েল বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সরকারের যেকোনো প্রলোভন থেকে সতর্ক থাকার জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাযুদ্ধের অনেক আগেই ফিলিস্তিনিদের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে দুই ভূখণ্ডের মানুষকে বঞ্চনা ও শোষণের হাত থেকে মুক্তি দিতে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। পাশ্চাত্য দুনিয়ার চোখ রাঙানি সত্ত্বে এই দুই মহান মানুষের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। এ কারণেই ইয়াসির আরাফাত বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রবল আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলেন, “The speciality of Mujib’s character was his uncompromising fighting leadership with a generous heart.”
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নীলনকশা প্রণয়নের অন্যতম কারিগর জ্যাকব লানডুর লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত ইহুদিদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ‘জিউস টেলিগ্রাফিক এজেন্সি’র ১৯৭১‑৭২ সালের দৈনিক বুলেটিনগুলো ঘাঁটলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেন এবং কীভাবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হলেন, তা সহজেই অনুমান করা যাবে। বঙ্গবন্ধুর এই নীতি ও দর্শনের কারণেই স্বাধীনতা লাভের ৫২ বছর পরে এসেও ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারির অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন প্রদান করাকে এখনো বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি মনে করে। এখনো বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ইসরায়েল ভ্রমণ এবং তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসা‑বাণিজ্য, লেনদেন এবং সম্পর্ক সৃষ্টি করাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে রেখেছে।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে অনেক দিন ধরেই ইসরায়েল নানা ধরনের প্রলোভন ও প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ এখনো কথিত এই রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তো দূরের কথা, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে কোনো ধরনের কথাবার্তাকেই ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে চলেছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল বিষয়ে আরব বিশ্ব সুর পাল্টালেও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে অবিচল থাকার নীতি গ্রহণ করে শেখ হাসিনা তাঁর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন চরিত্র বজায় রেখেছেন। এ জন্য তাঁর সরকার অবশ্যই ধন্যবাদের দাবিদার। তবে বিশ্ব ভূরাজনীতি ও অর্থনীতি দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকায় বাংলাদেশকে এখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে বঙ্গবন্ধুর মতো সাহসী ভূমিকা নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে হবে। কারণ, স্বাধীনতাযুদ্ধে পাঁচ পরাশক্তির মধ্যে একমাত্র রাশিয়াই বাংলাদেশকে অস্ত্র‑অর্থসহ সবচেয়ে বড় নৈতিক সহায়তা দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে খুন করে পাকিস্তানকে অর্থ‑অস্ত্রদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য দেশগুলো তাদের দোসরদের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিকে পাশ্চাত্যমুখী প্রবণতায় আর্থিকীকরণকৃত করে ফেলেছে। ফলে ভালো কিছু করতে গেলেই এখন তারা অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে চাপে ফেলার ভয় দেখায়। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পাশ্চাত্যের প্রত্যক্ষ মদদে ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদের ওপর বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীনভাবে যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাকে কাজে লাগাতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের জনগণ এখন পাশ্চাত্য দেশগুলোর ওপর তীব্র ক্রোধ ও ক্ষোভ পোষণ করছে। আর এ জন্য সবার আগে দ্রুত রপ্তানি ও জনশক্তি খাতে নতুন নতুন রাষ্ট্রের পানে ছুটে যেতে হবে এবং নাগরিকদের কার্যকর শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে খুন করে নৈতিক অবক্ষয়কিলষ্ট এ দেশের মানুষ বুঝতেই পারছে না যে ১০০ বছর আগে নিজেদের দেশে বাতিল করে দেওয়া বস্ত্র খাতের মাধ্যমে পাশ্চাত্য দেশগুলো আসলে আমাদের দারিদ্র্যের চক্রের মধ্যে আটকে ফেলেছে। তাই এখন তারা বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে পোশাক রপ্তানি বন্ধের হুমকি দিচ্ছে।
বাংলাদেশকে তার মানুষের উন্নয়নে যা‑যা করণীয়, তার সবকিছু করতে হবে। এখানে গুটিকয় মানুষের স্বার্থপর যুক্তি ও পরামর্শ শোনার কোনোই দরকার নেই। পোশাক রপ্তানি থেকে আয় কমে গেলে দাসের জীবন কাটানো পোশাকশ্রমিকদের আহামরি ক্ষতি হবে না। তারা কোনো কোনো কাজ করে ঠিকই রুটি-রুজি চালিয়ে যাবেন। এখন তো তারা পোশাক খাতে অমানুষিক শ্রম দিয়ে শরীরে পুষ্টি না দিতে পেরে ৩০‑৩৫ বছর বয়সেই বাতিলের খাতায় পড়ে বৃদ্ধ‑বৃদ্ধাতে পরিণত হচ্ছেন। কাজ না পেলে না খেতে পেয়ে হয়তো তারা আরও আগেই পৃথিবী থেকে চলে যাবেন। তবু তো তাদের জীবনভর সস্তায় শ্রম দিয়ে কঙ্কালসার সন্তান‑সন্ততি রেখে অকালে পৃথিবী থেকে অকালে চলে যেতে হবে না। মুনাফাজীবীদের গডফাদার পাশ্চাত্য‑নিয়ন্ত্রিত পোশাকসহ আর যেসব শোষণমূলক খাত‑ক্ষেত্র বাংলাদেশে আছে, তা থেকে দ্রুতই বাংলাদেশকে সরে পড়তে হবে। আর এই কাজ জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই কেবল করা সম্ভব। এ কথা রাজনীতির ধারে‑কাছে নেই এমন মানুষেরাও স্বীকার করে। তাঁকেই এসব শোষণ ও হুমকি‑ধমকির পথ বন্ধ করে যেতে হবে। তাঁর জীবনামলে বাংলাদেশের এসব মৌলিক সংকট দূর না হলে, আর কোনো কালেই তা হবে না। কারণ, তাঁর শরীরে যে সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত বহমান আছে।
লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি