• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

হোটেল বয় থেকে জাল নোট চক্রের হোতা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২২, ০২:১৬ পিএম
হোটেল বয় থেকে জাল নোট চক্রের হোতা

জীবিকার তাগিদে ১৯৮৭ সালে প্রথম বরগুনা থেকে ঢাকায় আসেন মো. ছগির হোসেন। কাজ নেন হোটেল বয়ের। পরবর্তীকালে ভ্যানে করে রাস্তায় বিভিন্ন গার্মেন্টসের পণ্য বিক্রি শুরু করতেন। এ কাজ করতে গিয়ে ২০১০ সালে তার পরিচয় হয় ইদ্রিস নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। ইদ্রিস জাল নোট তৈরির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। একসময় দুইজনের মধ্যে গড়ে ওঠে সুসম্পর্ক। ধীরে ধীরে ছগিরও শুরু করেন জাল নোট বিক্রি, সরবরাহ ও বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ। ২০১৬ সালে ইদ্রিসের মাধ্যমেই প্রথম জাল নোট তৈরিতে হাতেখড়ি নেন ছগির। পরে ২০১৮ সালে নিজেই গড়ে তোলেন জাল নোট তৈরি ও বিক্রি চক্র।

জাল নোট তৈরি চক্রের মূল হোতা ছগিরকে (৪৭) তার দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪-এর আভিযানিক দল।

গ্রেপ্তার বাকি দুইজন হলেন মোছা. সেলিনা আক্তার (২০) ও মো. রুহুল আমিন (৩৩)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, তিনটি প্রিন্টার, একটি হ্যান্ড এয়ার ড্রায়ার ও জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

পরে মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২৮ নভেম্বর মিরপুর মডেল থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল নোট তৈরি ও বিক্রি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট জব্দ করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের মূল হোতা ছগিরসহ অন্যান্য সহযোগীর বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট তৈরি ও বিভিন্ন মানুষের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে আসছে। তাদের চক্রে মোট ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে।

র‌্যাবের এই পরিচালক আরও জানান, এই চক্রের মূল হোতা ছগির নিজেই স্থানীয় বাজার থেকে জাল নোট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি ক্রয় করত। পরে ভাড়া বাসায় গোপনে বিশেষ কৌশলে এ-৪ সাইজের ২টি টিস্যু পেপারকে একসঙ্গে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রঙিন প্রিন্টারে ডিজাইনকৃত টাকা তৈরি করতেন। এরপর নিজেই কাটিং করতেন। এই পুরো কাজে তিনি অন্যদের সম্পৃক্ত করতেন না।

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, জাল নোট তৈরির পর ছগির তার অন্যান্য সহযোগীদের ফোন করে জাল নোট নিয়ে যেত বলতেন। প্রতি এক লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট তিনি ১০-১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। এরপর তার সহযোগীরা সেগুলো মাঠপর্যায়ে সরবরাহ ও বিক্রি করত। সহযোগীরা টার্গেট বা চাহিদা পূরণ করতে পারলে প্রতি মাসে তাদের বোনাসও দিতেন ছগির। গ্রেপ্তাররা সাধারণত কোনো মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জনসমাগম হয়, এমন স্থানে বিভিন্ন কৌশলে জাল নোট ব্যবহার করত। চলমান বাণিজ্য মেলা ও শীতকালে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল নোট তৈরির পরিকল্পনা ছিল তাদের।

জিজ্ঞাসাবাদে ছগির র‌্যাবকে আরও জানায়, করোনাকালে তিনি নিজেই মাঝে মাঝে স্থানীয় বাজারে জাল নোট ব্যবহার করতেন। এ সময় বেশ কয়েকবার সাধারণ মানুষের হাতে ধরাও পড়েছিলেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জাল নোট তৈরির পর অব্যবহৃত ও নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশগুলো পুড়িয়ে ফেলতেন তিনি। ধরা পড়ার ভয়ে ঘন ঘন বাসাও পরিবর্তন করতেন।

ছগিরের বিষয়ে র‌্যাব আরও জানায়, ২০১৬ সালে ইদ্রিসের কাছে জাল নোট তৈরির হাতেখড়ির পর ২০১৭ সালে তারা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এক বছর কারাভোগের পর ২০১৮ সালে জেল থেকে বের হয়ে একাই জাল নোট তৈরি ও বিক্রি শুরু করেন তিনি। পরে গ্রেপ্তার রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য ৭-৮ জনকে নিয়ে গড়ে তোলেন নিজের চক্র।

গ্রেপ্তার সেলিনা আক্তারের বিষয়ে র‌্যাব জানায়, সেলিনার স্বামীও জাল নোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। স্বামীর মাধ্যমে ছগিরের সঙ্গে পরিচয় ও জাল নোট কারবারে জড়িয়ে পড়েন কামরাঙ্গীরচরে একটি বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ানের কাজ করা সেলিনা।

গ্রেপ্তার রুহুল আমিনের বিষয়ে র‌্যাব জানায়, রুহুল আমিন ছগিরের অন্যতম সহযোগী। তার মধ্যমেই অন্যান্য সহযোগীদের পরিচয় হয় রুহুল আমিনের। এর আগে ২০১৭ সালে জাল নোট তৈরি ও বিক্রির মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। এখনো সেই মামলা চলমান।

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!