রাজধানীতে বিল পরিশোধ করতে না পারায় চিকিৎসাধীন জমজ শিশুকে জোর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে’র বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় জমজ শিশুর একজনের মৃত্যু হলে হাসপাতালটির মালিক ও পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ারকে (৫৭) গ্রেপ্তার করে র্যাব। নিজের হাসপাতালে রোগী ভর্তি করতে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দালাল নিয়োগ দেন তিনি।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এর আগে শুক্রবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-২ ও ৩ এর আভিযানিক দল।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সরোয়ার জানিয়েছেন, নিজের হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দালাল নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। এসব দালাল চক্র রোগীদের ফুঁসলিয়ে তার হাসপাতালে নিয়ে আসত। এই দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই গত ২ জানুয়ারি ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে’ ভর্তি হয় ওই জমজ শিশু।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ওই ভ্রাতাদ্বয়কে ভর্তির পর বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিল পরিশোধ না করলে চিকিৎসা করা হবে না বলেও হুমকি দেয়। এক ভুক্তভোগির পরিবার ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করলে হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ আরো টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু পরবর্তীকালে আর কোনো অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ শিশুদ্বয়ের চিকিৎসা বন্ধ করে দেয় এবং এক পর্যায়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। পরে রাস্তায় এক শিশুর মৃত্যু ঘটে এবং অন্য শিশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগির পরিবার হাসপাতালের মালিক ও পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ারের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করলে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার এই পরিচালক আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃত মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘ ২০-২২ বছর রাজধানীর রাজারবাগ, বাসাবো, মুগদা, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকার প্রায় ছয়টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। প্রায় এক বছর আগে শ্যামলীতে আমার বাংলাদেশ নামে হাসপাতালটি খুলে ব্যবসা শুরু করে। রোগী পেতে তৈরি করে দালাল সিন্ডিকেট। যারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফুসলিয়ে তার হাসপাতালে নিয়ে আসে।
হাসপাতালটির বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, হাসপাতালটিতে তিনজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত অবস্থায় থাকার কথা থাকলেও ছিলেন মাত্র একজন। দুইটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) এবং ৩০টি বেড থাকার কথা থাকলেও ছিল ৬টি আইসিইউ ও ১৫টি বেড। এছাড়া দুইটি ভেন্টিলেটর ছিল। নয়টি আইসিইউ থাকার কথা থাকলেও ইনকিউভেটর ছিল একটি।
মূলত আইসিইউ কেন্দ্রিক ব্যবসার ফাঁদ তৈরি করে মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ার অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছিল বলে জানিয়েছে র্যাব।