• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বায়ু দূষণে ফের শীর্ষে ঢাকা


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২২, ০৯:৫৪ পিএম
বায়ু দূষণে ফের শীর্ষে ঢাকা

বিশ্বে বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষ অবস্থানে চলে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। বাতাসে বায়ু দূষণের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ২৬৯। যার অর্থ হলো জনবহুল এ রাজধানীতে বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে। এবারের পরীক্ষায় দূষণের তালিকায় ঢাকার সঙ্গে শীর্ষস্থানে রয়েছে চীনের উহান (স্কোর ২৫২) ও ভারতের নয়াদিল্লি (স্কোর ২১৪)। 

এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসেও বৈশ্বিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষণের তালিকায় শীর্ষস্থানে ঢাকার সঙ্গে ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। ঢাকার বায়ুর মান তখন ছিল ১৮০, যা বায়ু মান সূচকে ‘অস্বাস্থ্যকর’। ঢাকায় বায়ু দূষণের উপাদান অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম–২.৫–এর উপস্থিতি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে প্রায় ২৭ গুণ বেশি। 

বুধবার গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, যেকোনো রাজধানীতে একিউআই স্কোর যদি ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে হয় তাহলে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা  স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। আর একিউআই স্কোর যদি ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। তখন বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণ লোকদের বাড়ির বাইরে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। 

গবেষণায় বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের ৫টি ধরনকে ভিত্তি করে- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)। রাজধানী ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণে ভুগছে। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ু দূষণের ৩টি প্রধান উৎস হলো ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও আবাসিক এলাকার নির্মাণ সাইটের ধুলো।

বায়ু দূষণের এমন শীর্ষে আসার পর রাজধানীতে বসবাস করা সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্ববিগ্ন দেখা যায়। বায়ু দূষণের এমন তীব্র মাত্রাকে দায়ি করছেন রাজধানী জুড়ে চলমান নানামুখী অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ আর রাজধানীর পাশে ইটভাটাকে। জনসাধারণ বলছে রাজধানীর ভিতর প্রতিদিনই কোনো কোনো এলাকায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি দেখা যায়। এতে প্রতিদিন ধুলাবালির রাজত্ব দেখা যায়। পাশাপাশি রাজধানীর গাঁ গেষে গড়ে ওঠেছে বহু ইটভাটা। যার মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে এমন বায়ু দূষণের তীব্রতা। 

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে বসবাস করে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ইদ্রিস মিয়া। প্রতিদিন সকাল বাসা থেকে পায়ে হেঁটে অফিসে যান কারওয়ান বাজার এলাকায়। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রতিদিন অফিস যাওয়া আসার পথ রাস্তার ধুলাবালি বেশ ভোগান্তির মধ্য আছি। গত একবছর এই রাস্তায় যাতায়াতে আমার শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি আর মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় বাসায় ধুলাবালির যন্ত্রণায় আছি।”  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) ভালো বলা যায়। এই মাত্রা ৫১-১০০ হলে বাতাসকে মধ্যম মানের এবং ১০১-১৫০ হলে বিপদসীমায় আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে অস্বাস্থ্যকর, ২০১-৩০০ হলে খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১-৫০০ হলে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বলা হয়।”

এব্যাপারে স্ট্যাম্পফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মজুমদার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বিশ্বের প্রায় সব দেশের প্রধান শহরগুলোর বায়ু দূষণের সূচক ২০০–এর নিচে চলে গেছে। আর ঢাকায় গতকাল পর্যন্ত বায়ুর মানের সূচক  ২৬৯–এর কাছাকাছি চলে গেছে। ঢাকায় যানবাহন কমলেও এখনো ইটভাটাগুলো চালু আছে, বড় অবকাঠামো ও অন্যান্য নির্মাণকাজও চলছে। সেগুলো থেকে বিপুল পরিমাণে ধুলা এসে রাজধানীতে জমা হচ্ছে। ফলে ধুলা নিয়ন্ত্রণে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।”
 

Link copied!