বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা জহুরা আক্তার। থাকেন রাজধানীর বনশ্রী এলাকায়। প্রতি মাসে পাঁচ সদস্যের পরিবারে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে পাঁচ লিটার। জহুরা আক্তার মাসের শুরুতে পুরো মাসের বাজার করেন। কিন্তু মাসের বাজার করতে এসে দেখেন বাসার আশপাশে কোনো দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না পাঁচ লিটারের বোতল। তেল নিতে হলে ১ লিটারের বোতল নিতে হবে। জহুরা আক্তারের অভিযোগ, গুটি কয়েক দোকানে তেল পাওয়া যায়, যা চাহিদার তুলনায় খুব সামান্য। জহুরার মতো অনেকেই পাড়া-মহল্লায় খুচরা বাজারে তেল কিনতে এসে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।
গত কয়েক মাসে দেশে ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট না থাকলেও দাম বেড়েছে দফায় দফায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তি। এর প্রভাবে দেশে দাম বাড়ছে। কিন্তু দেশে আমদানিকারক কোম্পানির কাছে এ মুহূর্তে পর্যাপ্ত তেলের মজুত আছে দাবি সরকারের। সরকার বলছে, অন্তত রমজান মাস পর্যন্ত সংকট তৈরি হওয়ার তেমন কোনো আশঙ্কা নেই। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কোম্পানি ও পরিবেশকরা মিলে বাজারে কৃত্রিমভাবে সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি করেছেন।
তেলের বাজারের অস্থিরতা নিয়ে রাজধানীর বেশ কয়েকটি পাড়া-মহল্লা ও পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার ঘুরেছেন সংবাদ প্রকাশের প্রতিবেদক। যেখানে প্রায় প্রতিটি এলাকায় খুচরা দোকানে বেশ কয়েক দিন ধরে চাহিদার তুলনায় কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছে মাসের বাজার একসঙ্গে করা সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা।
ক্রেতার অভিযোগ
চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা মতিউর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি দেখলাম বহু দোকানে তেল নেই। এরা বলছে, কোম্পানি নাকি সাপ্লাই বন্ধ রেখেছে। খুচরা বাজারসহ অলিগলির একাধিক দোকান ঘুরেও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। অনেককে তেল ছাড়া অন্যান্য বাজার সদাই নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।”
মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা গোলাম রাব্বানী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাজার থেকে সয়াবিন তেল গায়েব। রাতারাতি এত তেল গেল কোথায়। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ সংসার চালাবে কীভাবে। আর বাঁচবে কী করে।”
বনশ্রীর বাসিন্দা কাজলা মহল্লার নূপুর সাহা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাসার পাশের দোকানগুলোতে তেল কিনতে গেলে দোকানি সাফ জানিয়ে দিলেন এক লিটারের বেশি তেল নেওয়া যাবে না। আশপাশের কয়েকটি দোকানে গিয়েও সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি।”
খুচরা দোকানে নেই তেল
রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, মহানগর প্রজেক্ট, হাজিপাড়া সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় দোকানগুলোতে এক লিটার ও দুই লিটারের বোতল থাকলেও দোকানগুলোতে নেই ৫ লিটারের বোতল। প্রায় সব খুচরা দোকানে তেল সরবরাহ কমিয়েছে কোম্পানিগুলোর এজেন্টরা। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশে টিকে গ্রুপ, সিটি, মেঘনা, বসুন্ধরাসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের এজেন্টরা তেল সরবরাহ করে স্থানীয় বাজারগুলোতে। এখন এই এজেন্টরা তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। কোম্পানিগুলো নিজেরা একধরনের সিন্ডিকেট বানিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট করে রেখেছে।
বনশ্রীর আল্লাহর দান স্টোরের মালিক মো. ইসমাইল সংবাদ প্রকাশকে জানান, কম তেল মজুত থাকায় একজন ক্রেতার কাছে সর্বোচ্চ ১ লিটার তেল বিক্রি করছেন তারা। তার অভিযোগ কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।
রামপুরা বাজারের খুচরা বিক্রেতা মারুফ জানান, তাদের যে পরিমাণ পণ্যের দরকার, সে পরিমাণ তেল সরকার ও কোম্পানিগুলো দিচ্ছে না। যারা বেশি দাম দিয়ে কিনছেন, শুধু তাদেরই দেওয়া হচ্ছে, কখনো কখনো বোতলে গায়ের মূল্যে কিনতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে বেশ কয়েকজন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বাজারে রূপচাঁদা, তীরসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ বন্ধ। এ কারণে দোকানে সয়াবিন তেল কম তাদের।