কয়েক দিনের বিরতি শেষে আবারও করোনা শনাক্ত বেড়ে যাওয়ায় সরকার সংক্রমণ ঠেকাতে হোটেল রেস্তোরাঁয় টিকা সনদ ছাড়া খাওয়া যাবে না পাশাপাশি মোট আসনের অর্ধেক আসন খালি রেখে বসে খাবার খাওয়ার বিধিনিষেধ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমন সিদ্ধান্তকে এই ব্যবসার জন্য বিশাল ক্ষতি বলছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
সম্প্রতি ওমিক্রন নিয়ে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, যারা করোনার টিকা গ্রহণ করে নাই তারা হোটেল রেস্তোরাঁ বসে খাবার খেতে পারবেন না। হোটেলে খাবার খেতে হলে অবশ্যই টিকা সনদ দেখাতে হবে। পাশাপাশি হোটেলগুলোতে বসে খাওয়ার সময় খালি রাখতে হবে অর্ধেক আসন।
হোটেল-রেস্তোরাঁ খাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমন বিধিনিষেধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে হোটেল মালিক ও সাধারণ মানুষ। কিছু হোটেল মালিক এমন সিদ্ধান্ত নিজদের ব্যবসার ক্ষতি বললেও অনেক মালিক বলছে একবারে লকডাউনের মতো হোটেল বন্ধ না করে শর্ত সাপেক্ষে হোটেলে খাওয়ার নিয়ম করলে ভালো হবে। ফলে আমাদের ও হোটেলে খেতে আসা সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে স্টার হোটেল কাবাবের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সরকার যে সিদ্ধান্ত দিবে সাময়িক ক্ষতি হলেও আমরা তা মেনে নিব। কারণ এমন নিয়মে যদি করোনা পরিস্থির উন্নতি হয়ে তাহলে আমাদের সবার জন্য ভালো।”
অন্যদিকে রাস্তার পাশে ছোট হোটেলগুলোর মালিকরা বলছে ভিন্ন কথা। পান্থপথে রাস্তার পাশে ছোট হোটেলের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, “আমাদের এই হোটেলগুলোতে সাধারণত রিকশাচালক থেকে শুরু করে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ খেতে আসে। তারা অনেকে টিকা নেয়নি বা সবাই তেমন সচেতন না। আমরা যদি তাদের টিকা সনদ চাই তাহলে আমার কোনো বেচা বিক্রি থাকবে না। সরকারে এমন সিদ্ধান্ত গরিব মানুষকে মারার সিদ্ধান্ত।”
হোটেল রেস্তোরাঁয় খেতে টিকা সনদ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ কথা বলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে। ফার্মগেটে বই ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন থাকেন মিরপুরে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকেন দোকানে। ফলে দুপুর ও রাতের খাবার খেতে হয়ে হোটেলে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের খবর শুনে তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের সাধারণ অনেক সমস্যা হবে। আমরা অনেকে ভুলে টিকা সনদ বাসায় রেখে আসব। কিন্তু আমার খাবার খাওয়া খুব প্রয়োজন কিন্তু হোটেল মালিক আমার সনদের জন্য বাধা দেয় তাহলে আমরা কি একটা সনদের জন্য সারা দিন না খেয়ে থাকব।”
তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন বলেন, “আমরা ব্যাচেলর থাকি, এখানে সব সময় টিকা কার্ড থাকে না সঙ্গে। সরকার এমন নিয়ম করলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।”
হোটেল রেস্তোরাঁ খাবার নিয়ে সরকারের এমন বিধিনিষেধ নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি মহাসচিব ইমরান হাসান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গত দুই বছরে করোনার লকডাউনে আমাদের ব্যবস্থার খারাপ অবস্থা। দীর্ঘ লকডাউনে আমাদের অনেক হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।”
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি মহাসচিব বলেন, “টিকা সনদের কারণে অনেকে খেতে আসবে না। এইভাবে চলতে থাকলে এবারও অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে সরকার যেমন এই খাত থেকে রাজস্ব হারারে তেমনি এই খাতের সঙ্গে জড়িত মালিক শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আমরা সেটাকে বিশ্লেষণ করে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারে কাছে আমাদের দাবি জানাব।”