• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

যে কারণে বেতন পাননি দেড় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৫, ১১:১৬ এএম
যে কারণে বেতন পাননি দেড় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী
ছবি : সংগৃহীত

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অধীন এমপিওভুক্ত প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক ডিসেম্বর মাসের বেতন এখনো পাননি। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) জন্য তথ্যভান্ডার হালনাগাদ না হওয়ায় এ জটিলতা হয়েছে বলে মাউশির সূত্র বলেছে।

মাউশির মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম বলেন, তথ্যগত ভুলের কারণে চলতি মাসে মাউশির অধীন এমপিওভুক্ত সব শিক্ষক-কর্মচারীকে এখনো বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। সংশোধন শেষে ধাপে ধাপে বেতন দেওয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগির সব শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্যভান্ডার সংশোধন হবে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে বেতন-ভাতা পাবেন শিক্ষকেরা।

মাউশি সূত্র বলছে, মাউশির অধীনে দেশের ১৯ হাজার ২৪৭টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ ৯৮ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে সব তথ্য সঠিক থাকায় ইএফটিতে চলতি মাসের ১ তারিখে বেতন পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯০৭ জন। দ্বিতীয় ধাপে কিছু সংশোধন শেষে চলতি সপ্তাহে বেতন পাবেন ৬৭ হাজার ৪৪৪ জন। বাকি ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৪৯ জনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এখনো ডিসেম্বরের বেতন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক। তাঁদের ভাষ্য, আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ইএফটির জন্য তথ্য হালনাগাদ করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

জানা যায়, এত দিন প্রতি মাসে মাউশির হিসাব শাখা থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হতো। অনেক সময় বিভিন্ন জটিলতার কারণে তাঁরা দেরিতে বেতন-ভাতা পেতেন। মূলত স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে বেতন-ভাতা দিতেই ইএফটি পদ্ধতি চালু করে সরকার। ১ জানুয়ারি মাউশির অধীন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, অবসর ও কল্যাণসুবিধা ইএফটির মাধ্যমে দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

এমপিও হলো মান্থলি পে অর্ডার বা মাসিক বেতন আদেশ। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি মাসে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা সরকার থেকে পান। বেসরকারি বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নামের বানান, নামের অমিল, জন্মতারিখ, ব্যাংক হিসাবে তথ্যের গরমিলসহ নানা কারণে ইএফটির তথ্যভান্ডার হালনাগাদ হচ্ছে না। তাই ইএফটির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন-ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ধাপে ধাপে সংশোধন করে বেতন পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২১ সালে ইএফটিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আবার ইএফটিতে বেতন-ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ১৬৪টি। এগুলোর মধ্যে স্কুল ও কলেজ ২০ হাজার ৪৩৭টি, বাকিগুলো মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন সাড়ে ৫ লাখের মতো।

ডিসেম্বরের বেতন ব্যাংক হিসাব নম্বরে স্থানান্তর না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি। সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইএফটির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর না হওয়ায় তীব্র অর্থসংকটে পড়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাঁদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর আট বিভাগের ৮টি মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের ডিসেম্বরের বেতন পরীক্ষামূলকভাবে জানুয়ারিতে ইএফটির মাধ্যমে দিচ্ছে। বাকি মাদ্রাসাশিক্ষকদের বেতন ইএফটিতে দিতে তথ্যভান্ডার তৈরি করা হচ্ছে। এপ্রিলের মধ্যে মাদ্রাসার সব শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ইএফটিতে দেওয়া হবে বলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!