• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

১৫ বছর আগে ভাতের হাহাকার ছিল, এখন তা নেই : প্রধানমন্ত্রী


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪, ১১:২৮ এএম
১৫ বছর আগে ভাতের হাহাকার ছিল, এখন তা নেই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ বছর আগে ভাতের হাহাকার ছিল। ভিক্ষুকরা তখন ভাতের ফেন চাইত। এখন তা নেই।  

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে বড় শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং আঞ্চলিক সংঘাত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, নিউক্লিয়ার নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু নিরাপত্তা, তথ্য নিরাপত্তা, পানি নিরাপত্তা, অভিবাসন, সাপ্লাই চেইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মহামারি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে মূলত রাষ্ট্র/সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সুশীলসমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ করেন। এটি সমকালীন ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চপর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। এ বছরের ফোরামে ৩৫-জনের বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশগ্রহণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সফরের প্রথম দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি আমি ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট : স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ সংক্রান্ত একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। এই আলোচনায় আমার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি, বারবাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মটলে এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোসা জামির। প্যানেলটিতে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে আমি বক্তব্য প্রদান করি। বক্তব্যের শুরুতেই আমি গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে চলমানযুদ্ধ-বিগ্রহ, অবৈধ দখলদারত্ব এবং নিরস্ত্র মানুষের, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের, অমানবিক হত্যার কবল থেকে মুক্ত করে সকল প্রকারযুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর আহ্বান জানাই।”

তিনি আরও বলেন, “অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বহুদূর পর্যন্ত অনুভূত হয়, এ বিষয়ে আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এ প্রসঙ্গে আমি অর্থহীন অস্ত্র-প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় রসদ ও অর্থায়ন সহজলভ্য ও কার্যকর করার জন্য সকলকে অনুরোধ করি। মানবতার অস্তিত্বের সংকট কালে ক্ষুদ্র স্বার্থ যে শুধু অনর্থই বয়ে আনে, এই রূঢ় বাস্তবতা আমি সকলের সামনে তুলে ধরি। আর তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমাননিরাপত্তা ঝুঁকি এবং তা মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থায়নের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য বিশ্বের সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বহুবিধ নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশ ও জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি, প্রতিশ্রুত অর্থের বাস্তবিক হস্তান্তর, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করার ওপর আমি বিশেষভাবে জোর দেই। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবিলায় আমি ধনী দেশগুলোর রাজনৈতিক অঙ্গীকারের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে পারস্পরিক অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই। এদিন আমার হোটেল স্যুইটে ওমেন পলিটিক্যাল লিডারসের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সিলভানা খক্ মেহরিন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান এবং গত দেড় দশকে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। নারীর রাজনৈতিকক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য আমাকে ডব্লিউপিএলের ট্রেইলব্লেজার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩  গ্রহণের জন্য তিনি আমাকে আগামী ২০ মার্চ এথেন্সে অনুষ্ঠিতব্য সামিটে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। আলোচনায় আমি আমাদের সরকারের-বিশেষ করে নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত নীতিগুলোর বিষয়ে আলোকপাত করলে এ বিষয়ে পশ্চিমাবিশ্বের বাংলাদেশের নীতি ও কার্যক্রমগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।”  

তিনি বলেন, “একই দিন আমি কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন্ আব্দুলরামান আল-থানির সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জ্ঞাপনের পাশাপাশি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনাকালে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এলএনজি সরবরাহ প্রভৃতির পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও দ্রুত সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থনের ব্যাপারে তিনি আশ্বস্ত করেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও আমরা আলোচনা করি।”

প্রধানমন্ত্রী মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন ২০২৪-এ যোগ দিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি জার্মানি যান। তিনি দেশে ফিরে আসেন ১৯ ফেব্রুয়ারি। মিউনিখে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দেওয়া ছাড়াও বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

তাদের মধ্যে ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি এবং ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন।

মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের সভাপতির আমন্ত্রণে সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর দেশের বাইরে এটিই তার প্রথম সরকারি সফর।  জার্মানিতে অবস্থানকালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা।

এ সফরে জার্মানিতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি নাগরিক সংবর্ধনায়ও অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

Link copied!