• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটেই চলছে পুরোদমে বেচাকেনা


বিজন কুমার
প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৪, ১০:০৬ পিএম
রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটেই চলছে পুরোদমে বেচাকেনা
গাউছিয়া মার্কেটের ভেতরের অংশ। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

রাজধানীর নিউ মার্কেট রোডের গাউছিয়া মার্কেট। পরিধেয় কাপড়সহ, সাজসজ্জার জিনিসপত্র মিলিয়ে প্রায় শতাধিক দোকান রয়েছে এখানে। মার্কেটটিতে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপচে পড়া ভিড় থাকে। যেখানে এতো মানুষের যাতায়াত আর কর্মসংস্থান, সেই গাউছিয়া মার্কেট ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অগ্নি ঝুঁকি সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের অতি ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে। যা অনেকেরই অজানা।  

শুধু গাউছিয়া মার্কেটই নয়, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ২০২৩ সালের অগ্নি ঝুঁকিসংক্রান্ত পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানীতে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ৯টি, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি এবং ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি মিলিয়ে মোট ৫৮টি মার্কেট রয়েছে।

দপ্তরটির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গাউছিয়া মার্কেটসহ মোট ৯টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। সেগুলো হলো, ফুলবাড়িয়া আনন্দ বাজার এলাকার ‘বরিশাল প্লাজা মার্কেট’, টিকাটুলি শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক সংলগ্ন ‘রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট’, লালবাগ এলাকার ‘আলাউদ্দিন মার্কেট’, চকবাজার ঊর্ধ্বু রোড সংলগ্ন ‘শাকিল আনোয়ার টাওয়ার’ ও ‘শহিদুল্লাহ মার্কেট’,  সদরঘাটের চিত্ত রজ্ঞন অ্যাভিনিউ সংলগ্ন ‘শরীফ মার্কেট’  ও ‘মায়া কাটারা (২২ মার্কেট)’ এবং সিদ্দিক বাজারের ‘রোজনীল ভিস্তা’।

মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা ভবনগুলো হলো, জুরাইন কদমতলীর ‘আলম সুপার মার্কেট’, খিলগাঁওয়ের রেলগেটের ‘উত্তরা মার্কেট’, ডেমরার সারুলিয়ার ‘সাহেলা শপিং কমপ্লেক্স’ ও ‘মনু মোল্লা শপিং কমপ্লেক্স’, দোহার জয়পাড়া বাজারের ‘লন্ডন প্লাজা শপিং মল’, ওয়ারী ৪১ ব্যাংকিং স্ট্রিটের ‘এ কে ফেমাস টাওয়ার’ ও ২৯ র‌্যাংকিং স্ট্রিটের ‘রোজভ্যালি শপিংমল’, মিরপুর রোডের ‘মেহের প্লাজা’, ‘প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার’, ‘চিশতিয়া মার্কেট’, ‘নিউ চিশতিয়া মার্কেট’ ও ‘নেহার ভবন’, অ্যালিফ্যান্ট রোডের ‘ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্স’, ‘ইসমাইল ম্যানশন সুপার মার্কেট’ ও ‘সুবাস্থু অ্যারোমা শপিংমল’।

গাউছিয়া মার্কেট। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

আর ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় আছে, জুরাইন কদমতলীর ‘বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট’, খিলগাঁও এলাকার ‘খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেট’, ‘খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচা বাজার মার্কেট’ ও ‘তিলপা পাড়া মিনার মসজিদ মার্কেট’, ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার রোড সংলগ্ন ‘হাজী হোসেন প্লাজা’, সারুলিয়ার ‘ইসলাম প্লাজা’ এবং কোনাপাড়ার ‘নিউ মার্কেট’, দোহার জয়পাড়ার ‘আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স’ ও ‘এ হাকিম কমপ্লেক্স’, নবাবগঞ্জ বাঘাবাড়ী বাজারের ‘শরীফ কমপ্লেক্স’, মিরপুর কাফরুলের ‘বাচ্চু মিয়া কমপ্লেক্স’, মিরপুর-১৩’র ‘ড্রিমওয়্যার’, মিরপুর-১’র ‘এশিয়ান শপিং কমপ্লেক্স’, ‘মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট’ ও ‘ফেয়ার প্লাজা’, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ‘শেপাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’, ‘সিভিল ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড’ ও বেগুন বাড়ির ‘নাসা মেইনল্যান্ড’, ২৯ মাওলানা মুফতি দীন মো. রোড সংলগ্ন ‘জাকারিয়া ম্যানশন’, লালবাগের ‘হাজী আব্দুল মালেক ম্যানশন’, ওয়ারী নওয়াব স্ট্রিটের ‘ইপিলিয়ন হোল্ডিং লিমিটেড’, মিরপুর রোড সংলগ্ন ‘গ্লোব শপিং সেন্টার’, ‘চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট’, ‘চাদনী চক মার্কেট’, একই রোড সংলগ্ন উত্তর ডি ব্লকের ‘নিউ সুপার মার্কেট’, ৬ মিরপুর রোড সংলগ্ন ‘নূর জাহান সুপার মার্কেট’, নিউ মার্কেট এলাকার ‘হজরত বাকু শাহ হকার্স মার্কেট’, ১নং মিরপুর রোডের ‘ইসলামিয়া বই মার্কেট’, গুলিস্তানের ‘ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-১’, সিদ্দিক বাজারের ‘হান্নান ম্যানশন’, ফুলবাড়িয়া এলাকার ‘সিটি প্লাজা ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২’, ‘নগর প্লাজা’ ও ‘রোজ মেরিনাস মার্কেট’ এবং ৭টি ভবনের ‘দুকু টাওয়ার’।

অতিঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে, অধিকাংশ বিক্রেতাই কথা বলতে চাননি। কাপড় ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। এর ব্যবস্থা ওপরে যারা বসে আছেন তারা নেবেন।”

তোফায়েল নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, “অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই মার্কেটে। যদি বন্ধ করা হয় তবে অনেকেই কর্মসংস্থান হারাবে। যখন মার্কেট প্রস্তুত হয়েছে, তখনই তদারকি করা দরকার ছিল।”

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা গাউছিয়া মার্কেটের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস গত বছর জানিয়েছিল। এরপর তারা ঝুঁকি কমাতে নির্দেশনা দেয়, যা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন কমিটি এসেছে।”  

বরিশাল প্লাজ মার্কেটের ম্যানেজার মোস্তফা কামাল বলেন, “ফায়ার সার্ভিস অগ্নিঝুঁকি কমাতে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তা করা হয়েছে। যেমন, সিঁড়ি ব্লক ছিল, ক্লিয়ার করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”

পরিসংখ্যানে থাকা ভবনগুলোর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার বলেন, “পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দায়িত্বশীলদের নোটিশ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরপর কিছু ভবনে তারা অগ্নিঝুঁকিয়ে কমিয়েছে। মূলত তালিকা প্রস্তুত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়।”

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “গত বছর এক হাজার ৮৯০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। চেয়ারম্যান মহোদয়ের নেতৃত্বে আন্তঃসংস্থা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সতর্ক করার কার্যক্রম করছে। আমরা আশাবাদী, আগামী ২ বছরের মধ্যে ঢাকা শহর দুর্যোগ সহোনীয় শহর হয়ে উঠবে।”

Link copied!