• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে কমেছে বই বিক্রিও


আরিফ জাওয়াদ, ঢাবি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২, ১০:২৯ এএম
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে কমেছে বই বিক্রিও

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি একটি বড় প্রভাব পড়েছে ফুটপাতের বই বিক্রিতেও। দৈনন্দিন খরচ কমাতে পাঠক যেমনটা বই ক্রয় কমিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রেতারও বই বিক্রিও কমেছে। রাজধানীর নীলক্ষেতে ফুটপাতে বসা একটি বইয়ের দোকান বই কিনতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম।

বই নেড়ে-চেড়ে পাতা উল্টিয়ে দেখছেন মইনুল। এক পর্যায়ে বই বিক্রেতার সঙ্গে দাম না মেলাতে নিজ গন্তব্যে ছুটছেন মইনুল, চলতি পথে কথা হয় সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, “দৈনন্দিন জীবনে খরচের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। খাবারের একটি অংশ বাঁচিয়ে বই কিনতাম। কিন্তু এখন বাঁচানো অর্থ খাবারের পেছনে চলে যায় কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতেই সেই অর্থ খরচ হয়ে যায়।”

দেশের অন্যতম এক সংবাদ মাধ্যমে কাজ করেন অঞ্জন আচার্য। দৈনন্দিন খরচ বাড়ায় তিনিও বই কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আগে ১০ হাজার টাকার মত একটি অঙ্ক শুধু মাত্র বই কেনার পেছনেই ব্যয় করা হত। এখন সেটি কমিয়ে ২-৩ হাজার টাকায় করে ফেলেছি।”

আলামিন হোসেন নামে ঢাকা কলেজে স্নাতক পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “যেখানে জীবন চলাই অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে, সেখানে বই কেনা অনেকটাই বিলাসিতা হিসেবে দেখছেন। এখন বই কেনা হয় না সেভাবে। এভাবেই চলতি পথে বই উল্টিয়ে দেখে পরবর্তীতে চাকরির বই কিনে ঘরে ফিরতে হয়। পড়াশোনাও প্রায় শেষের দিকে, এখন চাকরি নামক যুদ্ধে নামতে হবে। খুব কম বই কেনা হয়, এর একটি বড় কারণ চাকরির প্রস্তুতি নিতে চাকরি সংক্রান্ত বই কিনতে গিয়ে একটি বড় অংশ এদিকে চলে যায়। শখ থাকলে সাধ্যের বাইরে গিয়ে পছন্দের প্রিয় লেখকের বই কেনা হয় না।”

ক্রেতাদের বই বিক্রি কমিয়ে দেওয়ার একটি বড় প্রভাব পড়েছে ফুটপাতের বইয়ের দোকানগুলোতে। জিনিস পত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাগজের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে বইয়ের দাম। দাম বাড়লেও আয়-রোজগারে ভাটা পড়ছে রাজধানীর নীলক্ষেতের ফুটপাতের বই দোকানিদের।

ছয় বছর ধরে ফুটপাতে বই বিক্রি করছেন মোহাম্মদ ফারুক। ফারুক বলেন, “আগে যে পরিমাণ বই বিক্রি করতাম এখন অনেক কম বিক্রি হয়। এখন তিন ভাগের এক ভাগ বই বিক্রি করি যেখানে এক সময় ৫০ পার বিক্রি করছি সেখানে এখন ১৫-২০ টা বই বিক্রি হয়। এখন ভাতের পয়সাই হয় না।”

রোস্তম আলী নামে আরেক ফুটপাতের বই বিক্রেতা জানান, “কাগজের পত্রের দাম বাড়ায় বইয়ের পত্রের দাম বাড়ছে। যে বই ১০০ টাকায় বেচতাম সেটা এখন কিনতেই হয় ১১০ টাকা করে। মোটামুটি আগে অনেক ভাল বিক্রি করছি সেই তুলনায় এখন খুব কম বই বিক্রি হচ্ছে। এক সময় সব মিলিয়ে ৮০০-৯০০ টাকার বই বিক্রি করেছি এখন ৫০০ টাকার বই বেচতেই অবস্থা খারাপ।”

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে বই ক্রয়-বিক্রয় কমলেও ক্রেতা-বিক্রেতার আশা ফুরোয়নি। হয়তোবা আগামীতে দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, পছন্দ বই রেখে হয়তো খালি হাতে ছুটবেন না, বই নিয়েই হয়তো গন্তব্যে যেতে পারবেন পাঠক। এদিকে বিক্রেতার আশা দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে দৈনন্দিন রোজগারও সেই আগের দৃশ্যে ফিরে আসবে, হয়তো তখন আর ভাতের পয়সা নিয়ে ভাবতে হবে না। চোখে-মুখে এমনই প্রত্যাশার ছাপ বই রাজধানীর নীলক্ষেতের বইয়ের বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে।

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!