বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশন কনকোর্স লেভেলে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬-এর উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, “বুধবার বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬-এর প্রথম অংশ উদ্বোধন করবেন।”
ওবায়দুল কাদের বলে, “২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলবে এবং ২০২৫ সালে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চলবে। আগামী বছরের ২৬ মার্চ থেকে সব স্টেশনে ট্রেন থামবে।”
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, “মেট্রোরেলে ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়া যাবে। আগারগাঁও থেকে উত্তরা ৬০ টাকা ভাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে যেতে পারবেন যাত্রীরা। মেট্রোরেলে কোনো হাফ পাস (ভাড়া) নেই। তবে মেট্রোরেল পাস নিলে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে। যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তা যৌক্তিক।”
এদিকে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ দেশের প্রথম এ মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ঠিক করেছে ৫ টাকা। গত ৮ সেপ্টেম্বর ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকাও প্রকাশ করা হয়। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। তার মানে মেট্রোরেলে চড়তে ন্যূনতম কুড়ি টাকা গুনতেই হবে।
উত্তরা দিয়াবাড়ি (উত্তরা নর্থ স্টেশন) থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ৬০ টাকা। উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা সাউথ স্টেশনে যেতে সর্বনিম্ন ভাড়া ওই ২০ টাকাই দিতে হবে।
উত্তরা নর্থ থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা।
আর পল্লবী থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া একই, ২০ টাকা। পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা।
মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপ চালু হলে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট যেতে গুনতে হবে ৩০ টাকা, আর কারওয়ান বাজার যেতে লাগবে ৪০ টাকা।
মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া ৫০ টাকা, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে যেতে লাগবে ৬০ টাকা। তবে মিরপুর-১০ থেকে কমলাপুর স্টেশনে যেতে লাগবে ৭০ টাকা ভাড়া।
দীর্ঘমেয়াদি পাস নিলে ভাড়ায় ১০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা নিতে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানি ডিএমটিসিএলকে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনা ভাড়া এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল পথ নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। তবে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশে রোকেয়া সরণিতে মেট্রোরেলের পিয়ার বসানোর খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয় পরের বছরের মাঝামাঝিতে।
গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। পরের বছর প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপোর মধ্যদিয়ে শুরু হয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায় কার্যক্রম। ধাপে ধাপে কাজ এগিয়েছে অগ্রাধিকারভিত্তিক এ প্রকল্পের; বাড়ানো হয়েছে এর রুটও।
রুট বাড়ানো ও ব্যয় বাড়ার আগে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল এগিয়ে নেয়ায় মোট ব্যয় বেড়ে হয় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।