• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
ছাত্রলীগের সম্মেলন

নতুন কমিটি গঠনে দেখা হচ্ছে পারিবারিক পরিচয়


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ০৬:৪১ পিএম
নতুন কমিটি গঠনে দেখা হচ্ছে পারিবারিক পরিচয়

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর)। এখান থেকেই নতুন দায়িত্ব দেওয়া হবে। এজন্য গত কয়েকটি সম্মেলনের মতো এবারও বয়সসীমা অনূর্ধ্ব ২৯ বছর। এই বয়সসীমার মধ্যেই নেওয়া হচ্ছে প্রার্থীদের খোঁজখবর। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, নেতৃত্বের গুণাবলি, পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত কি না—এসব দেখা হচ্ছে। নেতৃত্ব নির্বাচনে বিতর্কমুক্তদের বেছে নেওয়া হবে। এই যোগ্যতায় আলোচনায় আছেন প্রায় এক ডজন পদপ্রত্যাশী।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে সদস্যদের বয়সসীমা রয়েছে অনূর্ধ্ব ২৭ বছর। কিন্তু নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় গত তিনবার বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব ২৯ বছর করা হয়। সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখক ভট্টাচার্য দুই বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন করছেন। করোনাভাইরাসের কারণে তারা যথাসময়ে সম্মেলন করতে পরেননি। ফলে এবারের সম্মেলনেও বয়স বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার বয়সের ব্যাপারটি অনানুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি অন্য নেতাদের জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বয়সের ব্যাপারে তার আলোচনা হয়েছে। এবারও বয়সসীমা হবে ২৯ বছর। এটা বাড়ানো হবে না।

অন্যদিকে আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। তিনিও বয়সসীমা ও ছাত্রত্বের ব্যাপারে খোঁজ নেন। এ সময় তিনি গত সম্মেলনে ২৯ হওয়া বয়সসীমার প্রতি সমর্থন জানান। বয়সসীমার এ ব্যাপারটি স্পষ্ট হওয়ায় এবার নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন প্রায় এক ডজন পদপ্রত্যাশী। এদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অনেকেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রত্যক্ষভাবে মাঠে ছিলেন। এমন প্রার্থীদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিভাগ থেকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাইফুল্লা আব্বাছী অনন্ত। ছাত্রলীগের উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এবং সদ্য সাবেক ভিপি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমন। তিনি এর আগে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং তার আগে একই হলের কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বরিশাল অঞ্চল থেকে আছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক সবুর খান কলিন্স ও উপগণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক সোলাইমান ইসলাম মুন্না।

সবুর খান কলিন্স সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও ফজলুল হক মুসলিম হলের নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর সোলাইমান ইসলাম মুন্না ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাধারণ সম্পাদক, জহুরুল হক হলের দপ্তর সম্পাদক এবং তার আগে বরিশাল মহানগরের ১০নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পারিবারিকভাবেই তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া এই অঞ্চলের আরেক প্রার্থী শেখ ইনান বর্তমান ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনিও সংগঠনটির শীর্ষ পদে লড়ছেন।

তবে মাদারীপুর অঞ্চল-ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার জামি উস সানি ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের সভাপতি শহিদুল হক শিশির এদের মধ্যে আলোচিত নাম। জামি উস সানি এর আগে বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। যদিও আবরার হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। অন্যদিকে শিশির হল সংসদের সাবেক ভিপি এবং হলের সাবেক ছাত্রলীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। উভয়ের পরিবারই পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। খুলনা অঞ্চল-কেন্দ্রীয় মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, যিনি সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। এছাড়া একই অঞ্চলের রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আহসান হাবিব। এছাড়া ময়মনসিংহ থেকে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয়। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। একই অঞ্চলের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক রাকিব সিরাজীও শীর্ষ পদের আলোচনায় রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলোচনায় রয়েছেন আল আমিন শেখ। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে আরও আছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তিলত্তমা শিকদার, মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রনক জাহান রাইন। পারিবারিকভাবেও তারা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

দলীয় সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে আঞ্চলিকতার প্রাধান্য থাকে। সেক্ষেত্রে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গের প্রার্থীদের প্রাধান্য এবারও থাকতে পারে। গত কয়েকটি কমিটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই অঞ্চলের প্রার্থীরাই এগিয়ে থাকেন।

সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, “ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সের ব্যাপারে গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। বিভিন্ন কারণে সেটি বাড়ানো হয়ে থাকে। গত কয়েকটি সম্মেলনে বয়স ২৯ বছর করা হয়েছে। এছাড়াও প্রার্থীর একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, বিতর্কমুক্ত কি না—এসব ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।”

যানজট এড়াতে যেসব রাস্তা বন্ধ থাকবে

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন উপলক্ষে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) আশপাশের এলাকাগুলোতে রাস্তা বন্ধ রাখার পাশাপাশি রোড ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক-রমনা বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে যানজট এড়াতে রাজধানীর কাঁটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, ঢাবি মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ঢাবি ভাস্কর্য ক্রসিং ও উপাচার্য ভবন ক্রসিং এলাকায় সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্রাফিক ডাইভারশন চলবে। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে নগরবাসীকে ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করার অনুরোধ করা হচ্ছে।

Link copied!