• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নিরাপদ পানির দাম দ্বিগুণ, নগরবাসীর ক্ষোভ


বিজন কুমার
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৩, ০৯:২০ পিএম
নিরাপদ পানির দাম দ্বিগুণ, নগরবাসীর ক্ষোভ
সোনালিবাগ এলাকায় পানির বুথে সুবিধাভোগীরা

রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকার ইসরাফিল রানা। কয়েকটি খালি বোতল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন পানির এটিএম বুথের সামনে। বুথটি ঠান্ডা পানির হলেও, ইসরাফিলের চোখে মুখে যেন কেবল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। কারণ ‘ওয়াসা ও ড্রিংকওয়েল’র সমন্বয়ে সরবরাহকৃত নিরাপদ পানির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতি লিটারে ভ্যাটসহ ৪০ পয়সা।

ক্ষোভ ঝেড়ে ইসরাফিল রানা বলেন, ‘বাজারে প্রতিটা জিনিসের দাম বাড়তি। এবার পানির দামটাও আর থেমে নেই। পানির দামটাও এবার বেড়ে গেল। পানি অপর নাম ‘জীবন’। এটা তো খেতেই হবে। সুতরাং, অন্যকিছু কম খেয়ে পানিটাই খাবো। হঠাৎ করেই যদি একটা জিনিসের দাম বেড়ে যায়, তখন আমাদের সংসার আর শরীরের উপর চাপ পড়ে। কারণ জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আমাদের বেতন বাড়ে না। আর চাপা কান্না কাউকে বলতেও পারি না। আমাদের মত নিম্নআয়ের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিবেচনা করা উচিৎ সব বিষয়ে। পানিটা যেহেতু জীবন। সেহেতু এই পানি ফ্রি (বিনামূল্যে) করে দেয়া দরকার।’

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর টিএন্ডটি কলোনি এলাকার পানির পাম্পের সামনে কথা হয় ইসরাফিলের সঙ্গে। শুধু তিনি নয়, তার মতো অনেক সেবা গ্রহীতা বিপাকে পড়েছেন পানির মূল্য বৃদ্ধিতে। কারণ এর আগে এসব সেবাগ্রহীতা পানি কিনতে গুনতেন প্রতি লিটার ‘৪০ পয়সা’। সেখানে গত ১ আগস্ট থেকে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক পরিচালনা করা পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ড্রিংকওয়েল এই পানির দাম ভ্যাটসহ বাড়িয়েছেন আরও দ্বিগুণ। অর্থাৎ এখন পানি কিনতে গ্রহীতারা গুনছেন ভ্যাটসহ প্রতি লিটার ৮০ পয়সা। এতেই কেউ ক্ষোভ ঝাড়ছেন আবার কেউ নীরবে মেনে নিচ্ছেন। যদিও ড্রিংকওয়েল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় আর সিদ্ধান্ত মোতাবেক পানির নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা দোহাই দিচ্ছেন ‘মূল্যস্ফীতির’।

নিরাপদ পানির বিকল্প নেই। রাজধানীবাসীর কেউ বোতলজাত পানি পান করেন। আবার কেউ ইসরাফিলের মত লাইন দেন পানির বুথের সামনে। 

জানা যায়, পানির এমন সংকট মোচনে রাজধানীবাসীকে ২০১৭ সাল থেকে ওয়াসার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিরাপদ পানি সরবরাহ করছেন ড্রিংকওয়েল নামে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে রাজধানীজুড়ে সর্বোমোট পানির বুথ রয়েছে ২৯৫টি, এবং গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার।

নৈশ্য প্রহরী আলামিন বলেন, “পানির দাম বাড়ছে। আগে ১০০ টাকা কার্ডে নিতাম। তখন ১০০ টাকা দিয়ে ১০০ লিটার পানি নিতে পারলেও এখন পারি না। এরপরে আবার রিকশা ভাড়া ৪০ টাকা আছে। এই কষ্ট শুধু আমার জন্য নয়। সবার জন্যই। জিনিসপত্রের দাম বেশি। কিন্তু বেতন বাড়ছে না।”

আলাপচরিতায় পানি নিতে আসা হেদায়েতুল্লাহ্ শিপন বলেন, “পানি দৈনন্দিন সব কাজেই লাগে। পানির দাম দ্বিগুণ করা অযৌক্তিক একটা ব্যাপার। সবকিছুর দাম বাড়ছে। এই অজুহাতে পানির দামও বাড়বে, এটাতো মানা সম্ভব নয়। হ্যাঁ, বাড়বে ঠিকআছে, ১০ পয়সা বাড়াতেই পারে। কিন্তু একবারে ৪০ পয়সা। আমার মনে হয়, পানির দাম কমিয়ে আনা দরকার। কারণ পানির অপর নাম জীবন।”

পানি নিতে আসা ময়না বলেন, “কার্ডে টাকা ঢুকাইতে দেরি হয়। কিন্তু পানির দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই কার্ডের টাকা শেষ হতে দেরি লাগে না। আগে থেকে পানির দাম দ্বিগুণ। এখন টাকা বেশি দিয়ে আগের থেকে অর্ধেক পানি কিনতে হয়। এখন পানির থেকে টাকা বেশি খায়। পানি আর বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় না।”

ড্রিংকওয়েলের সহকারী ব্যবস্থাপক (অপারেশন ও সমন্বয়) সাদ্দাম হোসেন রনি বলেন, “১ আগস্ট থেকে পানির মূল্য ৭০ পয়সা এর পাশাপাশি ভ্যাট যোগ করে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি এবং দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে। এসব বিবেচনায় রেখে সেবার মান অব্যাহত রাখার জন্য এই সিদ্ধান্ত। ঢাকা ওয়াসা এবং ড্রিংকওয়েলের সমন্বয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।”

Link copied!