• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

সমালোচনার জবাবে যা বললেন বিদ্যানন্দের কিশোর


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৩, ১০:৩৩ এএম
সমালোচনার জবাবে যা বললেন বিদ্যানন্দের কিশোর
ফেসবুক লাইভে এসে সমালোচনার জবাব দেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস

হঠাৎ করেই সমালোচনার মুখে পড়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। একটি ছবিকে ঘিরে শুরু হয় সমালোচনা। পরে ‘মজিদ চাচা’ চরিত্রসহ আরও নানা ইস্যু নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা। এবার এসবের জবাব দিয়েছেন বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) ফেসবুক লাইভে সব সমালোচনার জবাব দেন তিনি।

কিশোর কুমার বলেন, বিদ্যানন্দের কাজকর্মে কেউ স্বচ্ছতা না পেলে, যে কেউ মামলা করতে পারেন। এর আগেও বিভিন্নজন উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। তার জবাবও দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কিশোর কুমার বলেন, এক নারী উদ্যোক্তার বানানো কিছু গয়নার ছবি দেখেই ওই সব গয়না বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে বিদ্যানন্দের ফেসবুক পেজে কোলাজ ছবি প্রকাশের সময় ওই নারী উদ্যোক্তার বানানো কয়েকটি গয়নার ছবিও প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে পেজ থেকে তা সরিয়ে ফেলা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। 

তিনি বলেন, বিদ্যানন্দের ৮ থেকে ১০টি ফেসবুক পেজ রয়েছে। আর সেগুলোতে প্রায় ৩০ হাজার লেখা আছে। তার মধ্যে ৩০টি লেখাতে ভুল থাকতেই পারে। বেতনভুক্ত কেউ লেখাগুলো লিখছেন না; লিখছেন তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা।

বঙ্গবাজার তহবিলে কত টাকা জমেছে, তা জানিয়ে কিশোর কুমার দাস বলেন, বঙ্গবাজার তহবিলে দুই কোটি টাকা জমা হয়েছে। এ টাকা অনুষ্ঠানিকভাবেই বিতরণ করা হবে। তবে অনুষ্ঠান কোথায় হবে, তা আগে থেকে কেন জানানো হয় না, তা নিয়েও অনেকে সমালোচনা করছেন। এর উত্তর হলো, আগে থেকে জানানো হলে অনেককেই চাঁদা দিতে হয়। প্রতিষ্ঠান এটি চায় না বলেই আগে থেকে স্থান জানানো হয় না।

পাহাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনা নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে কিশোর কুমার বলেন, মানুষ বিভিন্ন ভিডিওর অংশবিশেষ দেখে সমালোচনা করছেন। বিদ্যানন্দ বেশির ভাগ জমির মালিক না, লিজ নেওয়া জমিতে অনাথালয়, এতিমখানা, হাসপাতালের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শর্ত অনুযায়ী লিজ নেওয়া হয়েছে জমিগুলো। 

লিজ দেওয়া জমির দাতা বা প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দের কার্যক্রম বন্ধ করলে জমি ফেরত দিতে হবে। জমি কোনোভাবেই ব্যবসা বা পর্যটনের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে জমি দাতার কাছে ফেরত চলে যাবে। পাহাড়ে অনাথালয়গুলোতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা থাকছে; স্থানীয় লোকজনই সেখানে কাজ করছেন। তবে স্থায়ী উদ্যোগের জন্য কুড়িগ্রামে মেয়েদের এতিমখানার জন্য এক একরের বেশি জায়গা এবং রামুতে এতিমখানার জন্য জমি কিনেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

জাকাত নেওয়া প্রসঙ্গে কিশোর কুমার বলেন, বছর জাকাত না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিদ্যানন্দ। কিন্তু একজন হুজুর বলেছিলেন, কেউ জাকাত দিতে চাইলে কেন নেবেন না? সে কারণে সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়। এ ছাড়া জাকাত না নিলে আবার অনেকে প্রশ্ন তুলবেন বা অন্য ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হবে।

বিদ্যানন্দের অডিট প্রতিবেদন নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, যাদের মনে প্রশ্ন আছে, তারা একটু কষ্ট করে অডিট ফার্মের কাছ থেকে তথ্য নেন। বিদ্যানন্দ কারো কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে টাকা নেয় না। অডিট ফার্ম ব্যাংক থেকে হিসাব নিয়ে অডিট করে। নিয়ম অনুযায়ী ট্যাক্স, ভ্যাট সব পরিশোধ করা হচ্ছে।

মজিদ চাচা ইস্যু নিয়ে কটাক্ষ চলছে। এ বিষয়ে কিশোর কুমার বলেন, মজিদ চাচা একটি রূপক বা প্রতীকী চরিত্র। একবার সত্যিকার একজন উপকারভোগীর নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে ওই ব্যক্তির নাম একজন বিখ্যাত লোকের নামের সঙ্গে মিলে যাওয়ায়, তখন বলা হয়েছিল বিদ্যানন্দ ইচ্ছা করেই ওই বিখ্যাত ব্যক্তিকে অপমান করার জন্য কাজটি করেছে। 

এরপর থেকে শুধু মজিদ চাচা নন, এমন অনেক প্রতীকী নাম প্রচার করা হয়েছে। আর বিদ্যানন্দ নিবন্ধিত এনজিও, নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে টাকা নিতে কোনো সমস্যা তো হওয়ার কথা নয়।

সমালোচনার মুখে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় পান না বলেও জানিয়েছেন বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, টাকা না থাকলে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন না। তবে বর্তমানে যে সমালোচনা চলছে, তা পরিকল্পনা করেই কোনো গোষ্ঠী করছে। তবে কারও বিরুদ্ধে বিদ্যানন্দ কিছু বলবে না। কারণ যারা বিদ্যানন্দকে নিয়ে সমালোচনা করছেন, তারা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই তা করছেন। তারা ভাবছেন, বিদ্যানন্দ ভুল করলে তা দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে কেউ যেন মিথ্যা তথ্য প্রচার না করেন।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৩ সালে। চলতি ২০২৩ সালে সমাজসেবায় একুশে পদক পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

Link copied!