• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বদলে যাওয়া সদরঘাট


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম
বদলে যাওয়া  সদরঘাট
সদরঘাটের দৃশ্য: ছবি- নিজস্ব

এবারের ঈদুল ফিতরে বদলে গেছে রাজধানীর একমাত্র নদীবন্দর সদরঘাটের চিরচেনা চিত্র। আগে যেখানে যাত্রীদের পদচারণায় মুখর থাকতো, হৈ হট্টগোলে কানপাতা দায় হতো সেই চিত্র আর নেই। নেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। টিকিটের জন্য হাহাকার। ঈদের আগের দিনেও শান্ত, কোলাহলহীন। অবশ্য তাতে যাত্রীরা স্বস্তি পেলেও হতাশা দেখা দিয়েছে লঞ্চ মালিক, শ্রমিক, কর্মচারীদের মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থলপথের বিভিন্ন রুটে যানজট এবং নগরীর বিভিন্ন গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় গত দুইদিন ঘাটে যাত্রীর চাপ থাকলেও তা আগের মতো নয়। তাদের দাবি, পদ্মা সেতুর কারণে সদরঘাটের রুটে যাত্রী কমে নেমে এসেছে মাত্র ২০ শতাংশে।

সূত্রমতে, সদরঘাটের লঞ্চগুলোর দুই ধরণের যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। একটি কেবিন এবং অপরটি ডেক। বুধবার (১০ এপ্রিল) সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ডেক এবং কেবিন কোথাও যাত্রীচাপ নেই। হাতে গোনা কিছু যাত্রী অপেক্ষা করছেন নির্ধারিত স্থানে। লঞ্চের দায়িত্বে থাকা অধিকাংশকেই দেখা গেছে যাত্রী পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করতে। এছাড়াও লঞ্চঘাটের যারা খাবার সরবরাহ করেন তাদের ব্যবসাও ছিল মন্দা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রমতে, এই নদীবন্দর থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, ভোলাসহ প্রায় ৪৬টি রুটে লঞ্চ চলাচল করে।  মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) যাত্রীর চাপ থাকায় ১৫০টি লঞ্চ ছেড়েছিল। আর পরদিন বুধবার ছাড়ার কথা ছিল ৯৬টি। তবে কিছু লঞ্চ যাত্রা বাতিল করায় প্রায় ৭০টি লঞ্চের যাত্রা করার কথা ছিল।

অপরদিকে, লঞ্চ মালিক সমিতির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু হওয়ার আগে ১০০-১৫০টি লঞ্চ এই বন্দর দিয়ে চলাচল করতো। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৫০টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে চলাচল করছে। এ বছর যাত্রীদের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে গত ৬ এপ্রিল থেকে এবং শেষ হবে আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত।

আলাউদ্দিন নামের এক যাত্রী পায়ের ক্ষতস্থান দেখিয়ে বলেন, “এখন তো মানুষ নেই। এখানে যাত্রীর যাপে আমার ভেঙে গিয়েছিল, পা ছেঁচা খেয়ে ঘাঁ হয়েছিল। এখন সব ফাঁকা ফাঁকা। এটাও ভালো, কারণ স্বস্তিতে যাওয়া যায় বাড়ি।” সেলিম নামের এক যাত্রী বলেন, “সদরঘাটে এখন ফুটবল খেলা যায়। লোকজন নাই। ঈদের আগের দিন এমন গেছে লাফায়, ঝুলে লঞ্চে উঠতে হয়েছে। এখন নাচতে নাচতে যাওয়া যায়।”

মুকুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, “বাড়ি যেহেতু বরিশাল, সেহেতু লঞ্চেই বাড়ি যাই। পুরো রাত লাগে। গাড়িতে গেলে সময় কম লাগলেও গরমে অতিষ্ট অবস্থা হয়। তাই লঞ্চেই যাচ্ছি। ঈদের আগের দিন পায়ে পায়ে লাগতো মানুষ। এখন আর তেমন দেখি না।”

একটি লঞ্চের কেবিনের দায়িত্ব থাকা রফিকুল বলেন, “পদ্মা সেতু হওয়ার আগে লঞ্চে অনেক যাত্রী ছিল। ঈদের দুই চার দিন আগে থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত যাত্রী পাওয়া যেত। জায়গা দেওয়া যেতো না। কিন্তু সেই ব্যবসা আর নেই। বিভিন্ন গার্মেন্টস ছুটির পর যাত্রীচাপ দেখা গেলেও তা আগের মতো ছিল না।”

বাংলাদেশ লঞ্চ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম খান বলেন, এবারের ঈদুল ফিতরে দুই দিন যাত্রী ছিল। তবে যে যাত্রী পাওয়া গেছে আগের মতো নয়। পদ্মাসেতুর কারণে যাত্রী কমে যাওয়ায় যে লোকসান হচ্ছে তা ১০ বছরেও পুরণ হবে না। পদ্মা সেতু হওয়ার আগে এই সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রায় ১৫০টির মতো লঞ্চ ছেড়ে যেতো। এখন তা দৈনিক গড়ে ৪০-৫০টিতে নেমে এসেছে।

বিআইডব্লিউটিএ-এর বার্দিং সারেং এস এম মামুন বলেন, “এই নদী বন্দর থেকে ৪৬টি রুটে লঞ্চ চলাচল করে। মঙ্গলবার ১৫০টি লঞ্চ ছেড়েছিল। যাত্রীর চাপও ছিল। পরদিন বুধবার যে যাত্রীচাপ ছিল তা গেল বছরের চেয়ে কম। কিছু লঞ্চ যাত্রা বাতিল শেষে ৭০টি লঞ্চ ছেড়ে যাবে।” 

Link copied!