• ঢাকা
  • রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৫ মুহররম ১৪৪৬

বিএনপির গণমিছিল: গুরুত্বপূর্ণ ৯ স্থানে ‘পাহারা’ আ. লীগের


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২২, ০৮:১৩ পিএম
বিএনপির গণমিছিল: গুরুত্বপূর্ণ ৯ স্থানে ‘পাহারা’ আ. লীগের

আগামী শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) বিএনপির গণমিছিল ঘিরে পাড়া-মহল্লায় সর্তক অবস্থানে থাকবে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। এরআগে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউন করেছিল সরকারি দলটি। একইভাবে শুক্রবার নগরের পাড়া-মহল্লার প্রতিটি মোড়ে অবস্থান নেওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অবস্থান থাকবে। শুধু তাই নয়, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ আশ-পাশের অলিগলিতেও সতর্ক পাহারা থাকবে। পাশাপাশি রাজধানীর ৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বড় জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব স্পটে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও। এককথায় বলতে গেলে এসব কর্মসূচির মধ্যে নিজেরে শক্তির মহড়ার পাশাপাশি রাজধানীকে নিজেদের দখলে রাখতে চায় টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ।

দলটির নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের নেতারা জানান, সরকারবিরোধী দল বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ব্যর্থ হয়ে এখন গণমিছিলের নামে আবারও সরকার পতনের নতুন নতুন ছক কষছে। এই অবস্থায় বিএনপির কর্মসূচিকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি গণমিছিলের নামে সহিংসতা করবে। আমরা কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাব? গত ১০ ডিসেম্বরের মতো মতো আমরা সারা দেশে সতর্ক পাহারায় থাকব। ওইদিন যেমন ছিলাম একই অবস্থানে থাকব।”

৯টি স্পটে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ

শুক্রবার রাজধানীতে ৯টি স্পটে বড় সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরে সাতটি স্পটে সমাবেশ হবে। সেগুলো হলো-উত্তরার আমির কমপ্লেক্সের সামনে, মহাখালী ব্রিজের নিচে, ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে, গাবতলী, শ্যামলী স্কয়ারের সামনে, মিরপুর-১ নম্বর ও মিরপুর-১০ নম্বর এবং ভাটারা ইউলুপের সামনে। অপর‌্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে দুইটি স্পটে বড় সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকারি দলটি। স্পটগুলো হচ্ছে-২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং যাত্রাবাড়ী। এই স্পটগুলোতে সকাল থেকেই দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা কর্মীরা ১০ ডিসেম্বরের মতো সতর্ক পাহারায় থাকবেন।

দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কে কোথায় থাকবে

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির গণমিছিলের দিন নৈরাজ্য-নাশকতা এড়াতে রাজধানীর ৯টি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ স্পটগুলোতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরের শ্যামলী স্কায়ারের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে যাত্রাবাড়িতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কেন্দ্রীয় ও নগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, “ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ রাজধানীর সতিটি স্পটে সমাবেশ করবে। একই তারা (বিএনপি) যাতে কোনো ধরনের নৈরাজ্য করতে না পারে সেজন্য আমরা প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় থাকব। একই বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, “আমাদের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই সতর্ক পাহারায় থাকবে। একই সঙ্গে দুটি জায়গায় আমাদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আন্দোলন বা কর্মসূচির নামে যাতে কেউ কোনো ধরনের নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে আমাদের নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থান নিয়ে মাঠে থাকবে।”

কড়া পাহারায় সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন

সরকারি দলের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রাজধানীতে কড়া পাহারায় থাকবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় পাহারায় থাকবে। প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ইউনিট নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সকাল থেকে বড় জমায়েত করবে। এ ছাড়া মৎস্যজীবী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের আলাদা আলাদা কর্মসূচি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “বিএনপি-জমায়াতকে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করতে দেওয়া হবে না। তারা নৈরাজ্য প্রতিহত করতে আওয়ামী সেচ্ছোসেবক লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় থাকবে।”

মাঠে থাকবে এমপি ও কাউন্সিলররা

গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দলীয় সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের দলীয় কাউন্সিলরাও কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মাঠে ছিলেন। শুক্রবারের কর্মসূচিতেও তারা সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে মাঠে থাকবেন। এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “বিএনপির নৈরাজ্য প্রতিহতে নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা সকাল থেকেই মাঠে সতর্ক পাহারায় থাকব।” একইকথা জানিয়েছেন ঢাকা-৫ আসনের এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু। কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে সকাল থেকে অবস্থান নেবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক। তিনি বলেন, “এছাড়া ওয়ার্ডের মোহাম্মদবাগ ও মেরাজনগরসহ প্রতিটি মোডে মোড়ে তার কর্মী-সমর্থকরা সতর্ক পাহারায় থাকবে।”

জরুরি বর্ধিত সভা করেছে দক্ষিণ আওয়ামী লীগ

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জরুরি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি ষড়যন্ত্রে সিদ্ধহস্ত। কাজেই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকতে হবে। কোনো অবস্থায়ই যেন ষড়যন্ত্রকারীরা সফল না হয়। কর্মসূচির নামে অশান্তিকর, অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না, তারা দাঁতভাঙা জবাব দেবে।”

ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের সঙ্গে বর্ধিত সভা করেন কাদের। ওই সভায় তিনি নেতাদের নগরের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে ৩০ ডিসেম্বর মাঠে সতর্ক পাহারায় থাকার দিক নির্দেশনা দেন।

আগামী শুক্রবার (৩০ডিসেম্বর) রাজধানীতে গণমিছিল করবে রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এরইমধ্যে রাজধানীর পল্টন থেকে মগবাজার পর্যন্ত গণমিছিল করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। তবে গণমিছিলের নামে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) খন্দকার গোলাম ফারুক।

জনগণের ওপর হাত দিলে, সেই হাত ভেঙে দেবে যুবলীগ

জনগণের ওপর কোনো আঘাত আসলে রাজপথে বিএনপি-জামায়াতকে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। তিনি আরও বলেন, “যুবলীগ মাঠে আছে, জনগণের জানমালের ওপর হাত দিয়ে দেখেন আপনাদের সেই হাত ভেঙে দেব।”

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ’ আয়োজিত দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে “শান্তি সমাবেশ” অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

পরশের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় বক্তব্যে রাখেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচএম রেজাউল করিম রেজাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতারা।

পরশ বলেন, “বিএনপি-জামায়াত শুধু ক্ষমতায় আসার জন্য, লোভ-লালসার জন্য রাজনীতি করে। লোভ-লালসার বাদ দিয়ে দেশের এবং জনগণের কথা ভেবে রাজনীতি করলে ভালো হতো। জনগণের রাজনীতি বিএনপি করে নাই, সারাক্ষণ মিথ্যা আর অপপ্রচারের রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকে। এই ন্যাক্কারজনক রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাখান করেছে বলেও জানান যুবলীগ চেয়ারম্যান।”

যুবলীগের চেয়ারম্যান আরও বলেন, “বিএনপি বিচ্ছিন্নবাদী জঙ্গি সংগঠনে পরিণত হয়েছেন। গত ১০ তারিখে আপনাদের ডাকে জনগণ সারা দেয় নাই। ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু জনগণ ছাড়া আপনারা গণমিছিল করবেন কিভাবে। দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে আরাম আয়েশে আছেন, আর এদেশের তরুণ প্রজন্মকে বিপথে ঠেলে দিবেন, জঙ্গি সন্ত্রাসী বানাবেন তা হবে না। সেই দিন ভুলে যান।” তিনি বলেন, “আপনাদের বুঝতে হবে এদেশের মানুষ কি চায়? এদেশের জনগণ চায় প্রগতি উন্নতি, শান্তি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা। এ সকল চাহিদা বঙ্গবন্ধুকন্যা সঠিকভাবে পূরণ করেছেন বিধায় পর পর তিনবার তিনি ক্ষমতায় রয়েছেন। আগামী দিনেও তাকে জনগণ ভোট দিয়ে পঞ্চম বারের মত প্রধানমন্ত্রী বানাবে।”

শেখ হাসিনার অভাবনীয় সাফল্যে আপনারা (বিএনপি) ভীত-সন্ত্রস্ত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আমাদের পদ্মা সেতু হয়ে গেল, আমাদের স্বপ্নের মেট্রোরেল হয়ে গেল, সামনেই কর্ণফুলী টানেল হয়ে যাবে। আপনাদের রাজনীতি তো শেষ। তল্পি-তল্পা নিয়ে এখনই প্যাকেটে ভরে, বস্তাবন্দি করে ঘরে ফিরে যান। আপনাদের গণমিছিল গণমিছিল না, আপনাদের ট্যাকটিস বন্ধ করুন। জনগণকে আঘাত করার চেষ্টা করবেন না। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে গড়া সংগঠন। তিনি মুজিব বাহিনীর প্রধান, ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল হক মণি।” 

Link copied!