• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম
বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়, আগামী এক বছর রাজপথ কিংবা রাজপথের বাইরে কোথায়ও বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র-নৈরাজ্য ও অগ্নি সন্ত্রাস করলে চুল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না। তবে কখন, কোথায় কর্মসূচি থাকবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক করবে দলটি নীতিনীর্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সহিংসতা হচ্ছে না। তারপরও বিরোধী দলের কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের কর্মসূচিতে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না। এটা জনমনে যেমন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তেমনি বিরোধী দলও তাদের কর্মসূচিতে সরকারি দলের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনার সুযোগ পাচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের জন্যও সুখকর না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে রাজনীতিবিদদের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া। এ ছাড়া এ থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ আছে বলে তো দেখছি না। যা কোনোভাবেই কাঙ্খিত নয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগ, বিএনপি কর্মসূচি পালনের নামে আগুন-সন্ত্রাস, পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতা করে। সরকারি দল হিসেবে জনগণের জানমাল রক্ষা করা আওয়ামী লীগের ওয়াদা, দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ কারণেই অন্তত আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও গণসংযোগ চলবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ তার কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংঘাতে গেছে এমন একটা ঘটনা কেউ দেখাতে পারবে না। বিএনপির সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছাও আওয়ামী লীগের নেই।

দুই দলের শক্তির কৌশলী মহড়া

আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের আগে রাজপথ ও মাঠ দখলে সভা-সমাবেশ এবং পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না বিএনপি-আওয়ামী লীগের নেতারা। কথাযুদ্ধের লড়াই চলছে সমানে সমান। পাশাপাশি রাজপথেও মুখর তারা।

সংসদ ভোটের এক বছর আগেই মাঠ দখলের মহড়ায় লিপ্ত হয়েছে দল দুইটি। বিএনপি কর্মসূচির ডাক দিলে আওয়ামী লীগও একই দিন পাল্টা হাজির হচ্ছে রাজপথে। এর মাধ্যমে সরকারি দল চাচ্ছে রাজনীতির ময়দান নিজেদের অনুকূলে রাখতে। আর রাজপথের বিরোধী দলের সাধারণ মিছিল-সমাবেশের মতো অহিংস কর্মসূচির বিপরীতে সরকারি দল ‘শান্তি সমাবেশ’ ডাকায় ঘন ঘন চলছে উত্তেজনা। তবে বড় দুই দলের রাজপথের মিছিল-সমাবেশ ঘিরে যানজট আর ভোগান্তি মানুষের অসহনীয় ঠেকছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তিব্বত কলোনি বাজার সংলগ্ন রাস্তায় আয়োজিত ‘বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-নৈরাজ্য ও অগ্নি সন্ত্রাস’ প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এর আগে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের যৌথ সভায় আগামী ২৪ সাল পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের সর্তক অবস্থায় মাঠে থাকার নির্দেশনা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

কাদের বলেন, “চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছর জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

দলের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ঢাকায় যে কর্মসূচিই দিক না কেন, পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। অর্থাৎ বিএনপিকে একা মাঠে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে না। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নতুন কোনো নির্দেশনা না এলে এভাবেই আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে। এর মধ্যে বিরোধী দল নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রস্তুতি নিতে নিজ এলাকায় চলে যাবেন। আর বিএনপি ভোটে না এলে তাদের আন্দোলন ঠেকাতে যেখানে যে রকম দরকার, সে রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আওয়ামী লীগের রাজপথের কর্মসূচির সবকিছুই নির্ভর করছে বিএনপির ওপর। গত শনিবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা ২টায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি বাড্ডার হোসেন মার্কেট থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। এতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

একই দিন সকাল ১০টায় উত্তরার আজমপুরে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এতে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ করেছে যুবলীগ। এতেও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ওই যৌথসভায় বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি পালনের বিষয়ে নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচি সমাবেশে রূপ দেওয়ার। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। তবে একই দিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। এছাড়া ওই যৌথ সভায় বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দল, জোট ও সংগঠনের কর্মসূচিতে উসকানি না দিতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।

কাদের বলেন, “আমাদের তরফ থেকে কোনো সংঘাতমূলক পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়। আমাদের দলের এবং সরকারের যেন কোনো বদনাম না হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এখানে পাল্টাপাল্টির কোনো বিষয় নয়।”

ডিসেম্বর থেকে চলছে বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি

মঙ্গলবার বিএনপি গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে এবং ও বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে বুধবার বিকাল ৩টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সঞ্চালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

এতে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর দক্ষিনের নেতৃবৃন্দ।

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ‘সতর্ক পাহারা’ এর নামে মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে রাজধানী নিজেদের দখলে রাখার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ। এরপর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যত কর্মসূচি পালন করেছে। এই দিনগুলোতে কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব উপস্থিতির জানান দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাধিকবার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থেকে সরে আসার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বরাবরের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের কর্মসূচিকে পাল্টাপাল্টা নয় বলে দাবি করে আসছেন।  

এ পরিস্থিতিতে গণপদযাত্রা কর্মসূচির বাইরে সরকারি দলের উসকানিমূলক পাল্টা কর্মসূচি এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদরে সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “বিএনপি রাজপথে নির্বিঘ্নেই কর্মসূচি পালন করছে। আওয়ামী লীগ তো কোথাও হামলা করছে না। বরং বিএনপিই ক্ষমতায় থাকতে তৎকালীন বিরোধী দলের বেশিরভাগ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে।”

হানিফ বলেন, “এখনো আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করছে বিএনপি। এমনকি পুলিশের ওপরও হামলা চালিয়ে উস্কানিমূলক অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার চেষ্টা করছে মাত্র।”

Link copied!