অ্যাপভিত্তিক মোটরগাড়ি চালকদের সংগঠন ড্রাইভারস ইউনিয়ন অফ বাংলাদেশ (ডিআরডিইউ) পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগসহ ছয়টি দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) অ্যাপে যাত্রী বহন করা এক বাইকার তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে ধর্মঘটের ডাক এলো।
ডিআরডিইউর সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ছয়টি দাবি আগে থেকেই ছিল। আজ পুলিশের হয়রানির কারণে একজন বাইক রাইডার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলেছন। তাই সব অ্যাপভিত্তিক মোটরগাড়ি চালকরা প্রতিবাদ জানাতে একমত হয়েছেন।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের অন্য দাবিগুলো আদায়ের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি উল্লেখ করে বেলাল আহমেদ বলেন, “আমার ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে এসেছি, কিন্তু কেউ আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দিচ্ছে না।”
বেলাল আরও বলেন, “মঙ্গলবার দিনব্যাপী আমরা অ্যাপে লগইন করব না। এতে করে অ্যাপ কোম্পানিরা বুঝবে আমরা ছাড়া তারা অচল। সে জন্য যাত্রীদেরও আমরা অনুরোধ করব তারাও যেন আগামীকাল সারা দিন কোনো অ্যাপ ব্যবহার না করেন।”
পাশাপাশি আগামীকাল সকালে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন পালন করব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চালকরা তাদের ছয়টি দাবি নিয়ে একটি ভার্চুয়াল লিফলেট তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রচার চালাচ্ছেন।
দাবিগুলো হলো
১. অ্যাপনির্ভর শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিন, কর্ম ও সময়ের মূল্য দিন।
২. সব ধরনের রাইডে কমিশন ১০ শতাংশ নির্ধারণ করুন, মিথ্যা অজুহাতে কর্মহীন করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে রাইড শেয়ারিংয়ের যানবাহন দাঁড়ানোর জায়গা করে দিন।
৪. সব ধরনের পুলিশি হয়রানি বন্ধ করুন।
৫. তালিকাভুক্ত রাইড শেয়ারকারী যানবাহনগুলোকে গণপরিবহনের আওতায় অ্যাডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) মুক্ত রাখুন।
৬. গত বছর গ্রহণ করা সব এআইটি তালিকাভুক্ত যানবাহন মালিকদের ফিরিয়ে দিন।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা দিকে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের এক চালক।
এই ঘটনার একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, এক পাঠাও চালক ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তার ওপর নিজের মোটরসাইকেলে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। পথচারীরা আগুন নেভাতে চেষ্টা করলেও তিনি বাধা দিচ্ছেন। রাগে-ক্ষোভে জ্বলন্ত মোটরসাইকেলের দিকে হেলমেট ছুড়ে মারছেন।
ক্ষুব্ধ এই পাঠাও চালকের নাম শওকত আলম সোহেল। নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার কারণ জানতে তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
জানা গেছে, শওকত আলীর ছোট্ট একটি দোকান ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে কয়েক মাস ধরে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি।
২০১৫ সালে স্যাম নামে একটি অ্যাপভিত্তিক বাইক সেবা চালু হলেও বিষয়টি জনপ্রিয় হয় ২০১৭ সালে। ওই বছর আন্তর্জাতিক সেবা উবার চালু হয় দেশে। শুরুতে তারা প্রাইভেট কার ভাড়ার সেবা নিয়ে এলেও পরে আসে বাইক সেবায়ও।