অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিন ছিল সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি)। প্রতিদিনের ন্যায় আজও মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টা থেকে। চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত।
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৩টি। এছাড়া বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, শামসুজ্জামান খান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এ সময় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গোলাম মুস্তাফা ও এম আবদুল আলীম। আর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সারওয়ার আলী এবং সাইমন জাকারিয়া। এতে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন।
আনিসুজ্জামানকে নিষ্ঠাবান গবেষক, অঙ্গীকারাবদ্ধ সমাজ-চিন্তক শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে গোলাম মুস্তাফা বলেন, “আনিসুজ্জামানের গবেষণা শুধু বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায় সীমিত নয়, এগুলোর সামাজিক উপযোগিতা ও গুরুত্বও অনস্বীকার্য। আমাদের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে যেসব দ্বন্দ্ব নানা সময়ে প্রকট হয়েছে, তিনি সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সেই দ্বন্দ্বগুলোর যুক্তিসঙ্গত মীমাংসায় উপনীত হওয়াকে তার কর্তব্য বলে মনে করেছেন। এ কারণেই তার পাণ্ডিত্য ও গবেষণা বিদ্যায়তনিক সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনের পাথেয় হয়ে উঠেছে।
এছাড়া রফিকুল ইসলাম, শামসুজ্জামান খান শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে এম আবদুল আলীম বলেন, “ভাষাসংগ্রামী নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলাম এবং ফোকলোরবিদ শামসুজ্জামান খান বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে উজ্জ্বল দুটি নাম। আপন কর্ম সাধনায় তারা কীর্তিমান হয়েছেন। বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য এবং বাঙালি সংস্কৃতির পঠন-পাঠন, গবেষণা এবং উৎকর্ষ সাধনে তারা যে অবদান রেখে গেছেন, তা অতি গৌরবের।
এ সময় বক্তারা বলেন, “আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম এবং শামসুজ্জামান খান এই তিন মহীরুহ তাদের চেতনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ড দ্বারা আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তচিন্তার অধিকারী এই তিন মনীষী বাঙালি জাতিসত্তাকে অন্তরে ধারণ করেছিলেন। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় তাদের চিন্তাচেতনা ও দর্শন আমাদের পথ দেখাবে।”
এদিকে সভাপতির বক্তব্যে মুনতাসীর মামুন বলেন, “আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম ও শামসুজ্জামান খান তিনজনই সারাজীবন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নিবেদিত ছিলেন। তবু সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল অবিচ্ছিন্ন। ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়াই ছিল তাদের জীবনের আদর্শ, সংগ্রাম ও স্বপ্ন।”
মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, “সামাজিক ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য এই তিন কীর্তিমান বাঙালিকে আমাদের স্মরণ করতে হবে।”
অন্যদিকে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন হরিশংকর জলদাস এবং মোহিত কামাল।
এছাড়াও আজকের অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি বদরুল হায়দার, হাসনাইন সাজ্জাদী এবং হানিফ খান।
আর আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আহসানউল্লাহ তমাল, সাফিয়া খন্দকার রেখা, ডা. আওরঙ্গজেব আরু এবং মিজানুর রহমান সজল।
সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল ফরিদা ফারভীনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অচিন পাখি’ এবং মো. সাইফুল ইসলামের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উজান’-এর পরিবেশনা। এতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আবু বকর সিদ্দিক, আজগর আলীম, আলম দেওয়ান, রাজিয়া সুলতানা, সমীর বাউল, শান্তা সরকার, সুধীর মণ্ডল। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বেণু চক্রবর্তী (তবলা), নির্মল কুমার দাস (দোতারা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড) এবং গাজী আবদুল হাকিম।
আগামীকাল মঙ্গলবারের অনুষ্ঠান সূচি
আগামীকাল মঙ্গলবার অমর একুশে বইমেলার ১৫তম দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিকাল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া স্মরণ উপলক্ষে এদিন জামিলুর রেজা চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আব্দুল কাইয়ুম।
এ সময় আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোহাম্মদ কায়কোবাদ, মাসুদুল হক এবং মুনির হাসান। এতে সভাপতিত্ব করবেন আইনুন নিশাত। আর সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।








































