বাঙালি নারীর সাজ যেন টিপ ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। শাড়ি হোক বা সালোয়ার, কপালের ছোট্ট টিপেই সাজে আসে পরিপূর্ণতা। কিন্তু জানেন কি, এই সৌন্দর্যের অনুষঙ্গটিই হতে পারে ত্বকের জন্য বিপজ্জনক? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিপের আঠায় থাকা কিছু রাসায়নিক উপাদান দীর্ঘমেয়াদে চর্মরোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
সম্প্রতি ভারতীয় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গীতিকা শ্রীবাস্তব সতর্ক করেছেন, টিপের আঠায় এমন উপাদান পাওয়া গেছে যা থেকে হতে পারে ‘বিন্দি লিউকোডার্মা’, অর্থাৎ টিপের জায়গায় সাদা দাগ বা ত্বকের রঙের পরিবর্তন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টিপের আঠায় সাধারণত ‘পি-টার্শিয়ারি বিউটাইল ফেনল (P-Tertiary Butyl Phenol)’ নামের একধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এটি দীর্ঘ সময় ত্বকের সংস্পর্শে থাকলে মেলানোসাইট কোষ নষ্ট করে ফেলে।
এই মেলানোসাইট কোষেই তৈরি হয় মেলানিন, যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙ নির্ধারণ করে। কোষগুলো নষ্ট হলে ত্বকে সাদা দাগ, র্যাশ, ফুসকুড়ি বা ফোসকা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় লিউকোডার্মা। অনেক সময় এটি শ্বেতি রোগের মতো জটিল রূপও নিতে পারে।
টিপের আঠায় থাকা রাসায়নিকের কারণে অনেক সময় দেখা দেয় কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস—এক ধরনের ত্বকের অ্যালার্জি। এতে টিপের জায়গায় ত্বক লাল হয়ে যায়, চুলকায়, জ্বালা করে এবং ফুলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে ফুসকুড়িও দেখা দেয়। এসব লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ টিপ ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি।
সমাধান ও যত্নের উপায়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিপের আঠা থেকে চর্মরোগের ঝুঁকি কমাতে কিছু সহজ পদক্ষেপ নেওয়া যায়—
১. আঠা ছাড়া বিকল্প ব্যবহার করুন: রাসায়নিক আঠার বদলে কুমকুম বা প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি টিপ ব্যবহার করুন।
২. অ্যালার্জি পরীক্ষা করুন: নতুন টিপ ব্যবহারের আগে কনুই বা কানের পেছনে লাগিয়ে ১০–১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। প্রতিক্রিয়া হলে ব্যবহার করবেন না।
৩. টিপ দীর্ঘক্ষণ পরে থাকবেন না: সাজ শেষ হলে টিপ খুলে ফেলুন, এবং ত্বকে লেগে থাকা আঠা ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
৪. প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: চুলকানি, লালচে ভাব বা জ্বালা অব্যাহত থাকলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
টিপ বাঙালি নারীর সাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কিন্তু সৌন্দর্যের পাশাপাশি ত্বকের নিরাপত্তাও সমান জরুরি। তাই কেনার সময় টিপের মান ও উপাদান দেখে নিন, প্রয়োজনে প্রাকৃতিক বিকল্প বেছে নিন। একটু সচেতনতা আপনার ত্বককে রাখবে সুন্দর ও নিরাপদ।