হজ ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ, যা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলিমের জীবনে একবার পালন করা ফরজ। প্রতি বছর বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায় সমবেত হন এই মহামিলনে। হজ পালনের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট সময়, স্থান ও নিয়ম। যেগুলো পালন করেই একজন মুমিন হজ সম্পন্ন করেন। তাই হজের নিয়ম ও করণীয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হজের সংজ্ঞা ও শর্ত
হজ শব্দের অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প। ইসলামী পরিভাষায়, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কাবা শরিফ ও আশপাশের নির্ধারিত স্থানগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত পালন করাকে হজ বলা হয়।
হজ ফরজ হওয়ার শর্ত হচ্ছে মুসলিম হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবেকবান হওয়া, শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা, নারীদের ক্ষেত্রে মাহরাম থাকা।
হজের সময়সীমা
হজ পালনের নির্দিষ্ট সময় হলো।৮ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত।। তবে ইহরাম বাঁধা ও হজের নিয়ত করার সময় শুরু হয় শাওয়াল মাস থেকে।
হজ তিন ধরণের হয়। হজে তামাত্তু – উমরা করে ইহরাম খুলে রেখে পরে আবার হজের ইহরাম। হজে কিরান – উমরা ও হজ এক ইহরামে পালন। হজে ইফরাদ – শুধু হজ পালন, উমরা নয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হজযাত্রী হজে তামাত্তু পদ্ধতিতেই হজ পালন করেন।
হজ পালনের ধাপগুলো
ইহরাম বাঁধা (৮ জিলহজ)
হজ শুরু হয় ইহরাম বাঁধা দিয়ে। নির্দিষ্ট মিকাত (সীমা) অতিক্রমের আগে ইহরামের কাপড় পরে হজের নিয়ত ও তালবিয়া পড়তে হয়- 
"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক..."
ইহরাম বাঁধার পর নিষিদ্ধ কাজগুলো (যেমন চুল কাটা, ঝগড়া, শিকার করা ইত্যাদি) থেকে বিরত থাকতে হয়।
মিনায় রাত যাপন (৮ জিলহজ)
ইহরাম বাঁধার পর হজযাত্রীরা মিনায় গমন করেন এবং সেখানে রাত কাটান। সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান (৯ জিলহজ)
হজের মূল রুকন হলো আরাফার দিন আরাফার ময়দানে অবস্থান (ওকুফে আরাফা)। যোহর ও আসর এক আজানে দুই ইকামতে আদায় করা হয়।এই দিন বান্দার জন্য দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়।
সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে মুযদালিফার উদ্দেশে রওনা হন।
মুযদালিফায় রাত যাপন (৯ জিলহজ)
এখানে মাগরিব ও এশা একসাথে আদায় করতে হয়। রাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুমানো সুন্নত।এখানেই পাথর সংগ্রহ করা হয় (যেগুলো দিয়ে শয়তানকে পাথর ছোড়া হবে)।
শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ (১০ জিলহজ)
মিনা ফিরে এসে বড় জামারায় (জামারাতুল আকবা) ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয়। এরপর কুরবানি করা হয়। কুরবানি শেষে মাথা মুড়িয়ে বা চুল ছোট করে ইহরাম খোলা হয় (তাহাল্লুল)।
তাওয়াফে ইফাযা (১০–১২ জিলহজ)
কাবা শরিফে গিয়ে হজের তাওয়াফে ইফাযা করতে হয় (ফরজ)। তাওয়াফ শেষে সাঈ (সাফা-মারওয়ার মধ্যে হাঁটা) করতে হয়।
মিনায় অবস্থান ও পাথর নিক্ষেপ (১১–১২ জিলহজ)
হজযাত্রীরা আবার মিনায় ফিরে যান। ১১ ও ১২ তারিখে তিনটি জামারাতে ৭টি করে (মোট ২১টি) পাথর ছোড়েন। চাইলে ১৩ তারিখে আবার ২১টি পাথর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করা যায় (এটি সুন্নত)।
বিদায়ী তাওয়াফ (তাওয়াফে বিদা)
হজ শেষে মক্কা ছাড়ার আগে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয় (ওয়াজিব)। এটি শুধু হজ পালনকারীদের জন্য, উমরার ক্ষেত্রে নয়।
হজ পালনের কয়েকটি পরামর্শ
শারীরিকভাবে সুস্থ থেকে প্রস্তুতি নিন। হজের নিয়মাবলি আগে থেকেই ভালোভাবে শিখে নিন বা গাইডবই সঙ্গে রাখুন। ভিড় এড়িয়ে চলুন ও গাইডের নির্দেশ মেনে চলুন। নামাজ ও দোয়া বেশি বেশি করুন, কারণ হজে প্রতিটি ইবাদত অশেষ সওয়াবের দরজা খুলে দেয়।
                
              
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    






































